জ্ঞানের নতুন ঠিকানা শহরে !

কলকাতা জেলা রাজ্য শিক্ষা

নিউজ পোল ব্যুরো : গ্রামের সংস্কৃতি শহরের প্রাণস্পন্দনে এসে উঁকি মারছে এক অন্য রকম চেহারায়। যেখানে আমরা সাধারণত গ্রামে হাট দেখতে অভ্যস্ত, যেখানে মাছ, মাংস, আনাচে কানাচের নানা জিনিস বিক্রি হয়, সেখানে হাওড়ার ব্যাঁটরায় এবার গড়ে উঠেছে এক বিশেষ ধরণের হাট। তবে, এটি মাছ-মাংস বা খাদ্যবস্তু বিক্রির হাট নয়, এটি একটি বইয়ের হাট। হাওড়ার ব্যাঁটরা পাবলিক লাইব্রেরিতে বসেছে এই অদ্ভুত এবং চমৎকার বইয়ের হাট। এটি এমন একটি উদ্যোগ, যা মানুষের মধ্যে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং জ্ঞানের বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করবে।

এই বইয়ের হাটটি হাওড়ার ব্যাঁটরার ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরির অন্তর্ভুক্ত। এই লাইব্রেরি এক শতাব্দী বছরেরও বেশি পুরোনো। এখানকার ইতিহাস, সভ্যতার বিবর্তন অনেক আগের দিনের স্মৃতি বিজড়িত। বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক যেমন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব এই লাইব্রেরিতে এসেছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে লাইব্রেরিটি সভ্যতার অগ্রগতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুরুর দিকে বই পড়া ছিল এক ধরনের সম্মানজনক কাজ, কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের যুগে সেই আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে। তবে, এই বইয়ের হাট নতুন প্রজন্মের কাছে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন।

উদ্যোক্তাদের মতে, বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানো এবং তাঁদের জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই অভিনব আয়োজন। এখানে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সম্ভার রয়েছে, যা কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বয়স্ক সবার জন্যই উপযোগী। মাধ্যমিকের নিচে পড়ুয়া কিশোরদের জন্য যেমন আলাদা বইয়ের ব্যবস্থা আছে, তেমনি বড়দের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। এই হাটে শুধু যে বই বিক্রি হচ্ছে তা নয়, বরং বইয়ের ব্যাপারে নতুন চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, যখন পৃথিবী একটি ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে, সেখানে মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু, হাওড়ার ব্যাঁটরার বইয়ের হাট সেই ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে সাহায্য করছে। এই হাটে আসা মানুষজন শুধু বই কেনার জন্যই নয়, বরং এখানে এসে অতীতের স্নিগ্ধ পরিবেশে আবার কিছুটা হারানো জ্ঞান লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। এই বইয়ের হাট শুধু একটি বাজার নয়, এটি একটি শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনস্থল। এখানে মানুষ এসে নতুন দিগন্তের সন্ধান পাচ্ছে, যা তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে কখনও ভাবেননি।

সার্বিকভাবে, হাওড়ার ব্যাঁটরার বইয়ের হাট শুধু একটি বই বিক্রির জায়গা নয়, এটি মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানোর একটি উদ্যোগ। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে শুরু হওয়া এই বিশেষ হাটে অসংখ্য মানুষ এসে বই কিনছেন, নিজেদের জ্ঞানের সীমা বাড়াচ্ছেন, এবং এইভাবে এক মুঠো অতীতের চিরন্তন সৌন্দর্য্য থেকে জীবনের নতুন দিশার সন্ধান পাচ্ছেন।