নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া : হাওড়ার উত্তর সালকিয়ার মেয়ে সৌবৃতি মণ্ডল আবারও প্রমাণ করলেন যে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। ৬৮তম জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক ও একটি রৌপ্যপদক, যা গোটা বাংলার গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই জাতীয় পর্যায়ে এই উজ্জ্বল সাফল্য তাঁকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
সৌবৃতির বাড়ি উত্তর হাওড়ার সালকিয়া সিতানাথ বোস লেনে। ছোটবেলা থেকেই সাঁতারের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। বাড়ির কাছেই সালকিয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন থেকে তাঁর সাঁতারে হাতেখড়ি। মাত্র চার বছর বয়সে যখন তিনি প্রথমবার জলে নেমেছিলেন, তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখা গিয়েছিল। তাঁর কোচ বিশ্বজিৎ ঘোষের তত্ত্বাবধানে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলে। আজ সেই পরিশ্রমেরই ফল হাতেনাতে মিলেছে জাতীয় স্তরে।
এই প্রতিযোগিতায় সৌবৃতি ব্যাকস্ট্রোকে ২০০ মিটার এবং ১০০ মিটারে স্বর্ণপদক জয় করেছে। এছাড়াও, ৫০ মিটার বিভাগে রৌপ্যপদক জিতে আরও একবার নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। তাঁর এই সাফল্যে স্বভাবতই আনন্দে আত্মহারা পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে প্রশিক্ষক ও এলাকার মানুষজন। সালকিয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সামনে সৌবৃতির এই কৃতিত্ব তুলে ধরে বিশাল ব্যানার লাগানো হয়েছে, যা দেখে গর্বিত স্থানীয়রা।
কোচ বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, ‘মাত্র চার বছর বয়স থেকে সৌবৃতি আমাদের এখানে অনুশীলন করছে। ছোট থেকেই ও প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও একাগ্র। বিশেষ করে, তাঁর শারীরিক উচ্চতা ও শক্তি তাঁকে সাঁতারে এগিয়ে রাখে। ওঁর অধ্যবসায় বরাবরই চোখে পড়ার মতো। একসময় রাজ্য ও জাতীয় স্তরের জুনিয়র বিভাগে তাঁর সাফল্য এসেছে, আর এখন সিনিয়র বিভাগেও সে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করছে। ওঁর সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত। আমি চাই ও আরও এগিয়ে যাক।’
বর্তমানে সৌবৃতি দিল্লির তালকোটরা সুইমিং কমপ্লেক্সে কঠোর অনুশীলন করছে, যেখানে তিনি আরও ভালো পারফরম্যান্সের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করছে। তাঁর কোচিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনের কড়া অনুশীলন তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর ভবিষ্যতের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। সাঁতারের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও আত্মনিবেদন দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এলাকার তরুণ সাঁতারুরাও এখন সৌবৃতিকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে। তাঁর এই সাফল্য শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। স্থানীয়রা আশা করছেন, ভবিষ্যতে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। সৌবৃতির এই কৃতিত্ব প্রমাণ করে যে স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হাওড়ার মেয়ে সৌবৃতি আজ গোটা বাংলার গর্ব, আর তাঁর সাফল্যের এই যাত্রা যেন এখানেই থেমে না থাকে—এটাই সবার চাওয়া।