কাত্যয়নীর পুজোয় মাতল কুরিটবাসী

জেলা রাজ্য সংস্কৃতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: মাঘ মাসে দুর্গাপূজা? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। বাংলার দিকে দিকে সরস্বতী পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই হাওড়ায় আমতায় দেবী দুর্গার অকালবোধন উৎসব। প্রতি বছর এক নতুন আলো নিয়ে আসে অষ্টাদশভূজা কাত্যয়নী দেবী দুর্গার অকালবোধন উৎসব। তবে এই দুর্গোৎসব আশ্বিন মাসে হয় না, মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে শুরু হয় কাত্যয়নী দেবী দুর্গার অকালবোধন। এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর আয়োজনে থাকে কুরিট গ্রামের বাসিন্দারা। সাধারণত এই গ্রামে অন্য পুজো হয় না। এই পুজোই গ্রামের বড় উৎসব। পুজো ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা।

এই পুজো দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দীর ঐতিহ্য বহন করছে। কুরিট গ্রামের মানুষের কাছে এটি একটি বিশেষ সংস্কৃতির অংশ, যা তাঁদের জীবনধারাকে একতাবদ্ধ ও আনন্দময় করে তোলে। কুরিট ছাড়াও আশেপাশের অন্যান্য গ্রামগুলো থেকেও বহু মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। যা পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। কেন এই পুজোর শুরু হয়েছিল তা অনেকেই জানেন না। এক সময় গ্রামবাসীরা মনে করতেন, প্রকৃতি তাঁদের সহায়ক নয়। গরমে বৃষ্টির অভাব বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে প্লাবন সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখানকার বাসিন্দারা নাজেহাল হয়ে পড়ে। বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে এলাকাবাসী গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল এই বছর আয়োজন।

মূলত, খরা ও শস্যহানির হাত থেকে বাঁচতে এলাকার মানুষ ঋষি কাত্যয়নের মন্ত্রপূত অষ্টাদশভূজা দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন। মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হয়। কুরিটের তারাময়ী আশ্রম সংলগ্ন মাঠে এই পুজোর সূচনা হয়। এখানে তন্ত্র মতে সপ্তমী অষ্টমী নবমী ও দশমী পর্যন্ত পুজো চলে। উৎসবের সময় পুজো প্রাঙ্গণে ভিড় জমে বিশেষ করে সপ্তমীর সন্ধ্যায় যখন মেলা বসে এবং গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে তা উদযাপন করে। স্থানীয় মানুষদের জন্য এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় বরং একটি সামাজিক মিলন মেলা।

নবমীতে মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয় যা পূজোর অন্যতম আকর্ষণ। এই মহাযজ্ঞে ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি সবার জন্য এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ৮ থেকে ৮০ সব বয়সের মানুষই এখানে আসেন এবং একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।

পুজোর উদ্যোক্তা উত্তম কুমার কোলে জানিয়েছেন, ‘এই চারদিনে গ্রামের সবাই একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। অনেকেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও এই সময় তারা নিজেদের গ্রামের ফিরে আসেন এবং উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এই উৎসব শুধু কুরিট গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, আশেপাশে ছোট মহরা, বড় মহরা, কোটালপুর, বলরামপুর, পুঁটিখালি সহ বহু গ্রামের মানুষও এতে সামিল হন।’

এই পুজো উপলক্ষে এখানে মেলাও বসে। দোকানিরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে নানারকম খাবারের দোকান সব থাকে এই মেলায়। ব্যাপক ভিড় জমে যায় দর্শনার্থীদের।