নিউজ পোল ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পর এবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু(Droupadi Murmu) মহাকুম্ভ মেলায় অংশ নিলেন। রবিবার রাতে প্রয়াগরাজে পৌঁছন ও সোমবার ভোরে তিনি পবিত্র ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে পুণ্যস্নান করেন। হিন্দু ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সঙ্গমস্থলে স্নান করলে পাপমোচন হয় এবং মোক্ষলাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়। রাষ্ট্রপতির এই তীর্থযাত্রা ধর্মীয় মহলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রতি ১২ বছর অন্তর আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। লক্ষ লক্ষ সাধু, তীর্থযাত্রী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে সমবেত হন। রাষ্ট্রপতির এই মহামিলনে অংশগ্রহণ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ উদ্দীপনা তৈরি করেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু(Droupadi Murmu) ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করার আগে গঙ্গার তীরে বিশেষ পূজার্চনা করেন। বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় তাঁর পূজা। রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর এই মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাষ্ট্রপতি মুর্মু শুধু পুণ্যস্নানই করেননি, তিনি আশপাশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানে দর্শনও করেছেন। তিনি গঙ্গার ঘাটে গঙ্গা আরতির সাক্ষী থেকেছেন এবং বিভিন্ন আখড়ার সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। মহাকুম্ভ মেলায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই পবিত্র স্থানে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ত্রিবেণী সঙ্গমের জলে স্নান করার অভিজ্ঞতা অবিস্মরণীয়। এটি শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির গভীরতাকে উপলব্ধি করার একটি সুযোগ।’
রাষ্ট্রপতির মহাকুম্ভে উপস্থিতি সাধু-সন্ন্যাসীদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সাধু-সন্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে আশীর্বাদ প্রদান করেন। তাঁরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর এই যাত্রা ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। এটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে তাঁর সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক চেতনাকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত করবে।’

রাষ্ট্রপতি মহাকুম্ভ সফর তাঁর সামাজিক বার্তার দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি সবাইকে একতার বার্তা দেন এবং বলেন, ‘কুম্ভ মেলা শুধু ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি ভারতীয় ঐক্য ও সহনশীলতার এক অনন্য উদাহরণ। এই মেলা প্রমাণ করে যে ভারত তার বহুমুখী সংস্কৃতির মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ।’
রাষ্ট্রপতির সফরকে কেন্দ্র করে প্রশাসন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ড্রোন ও সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। রাষ্ট্রপতির যাত্রাপথে বিশেষ ব্যারিকেড বসানো হয় এবং জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।
ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যস্নান সেরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু(Droupadi Murmu) প্রয়াগরাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারত কোকিল ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র স্মারক এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক মন্দির। সূত্রের খবর, এখান থেকে তিনি অন্যান্য সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিতে অন্যত্র রওনা হবেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি ভারতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতাকে সম্মান জানানোর প্রতীক। তাঁর উপস্থিতি মহাকুম্ভের মাহাত্ম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং দেশের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও আধ্যাত্মিকতার নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।