Mahakumbh : মাঘী পূর্ণিমায় ভক্তদের ঢল, নিরাপত্তার চাদরে মোড়া মহাকুম্ভ

অফবিট দেশ

নিউজ পোল ব্যুরো : মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় উন্মাদনা তুঙ্গে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের (Uttarpradesh) প্রয়াগরাজে আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলাকে (Mahakumbh) ঘিরে লাখো ভক্তের ঢল নেমেছে। পবিত্র গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনা, ধর্মীয় আলোচনাসভা ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানের জন্য ভোর থেকেই শুরু হয়েছে ভক্তদের সমাগম। প্রতি বছর এই দিনে তীর্থযাত্রীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে পুণ্য অর্জনের আশায় গঙ্গাস্নান করেন। শাস্ত্র অনুযায়ী, এই পবিত্র দিনে গঙ্গাস্নান করলে জীবনের সমস্ত পাপ মোচন হয় এবং পরলোকেও শুভফল লাভ করা যায়। ফলে, মাঘী পূর্ণিমার (Maghi Purnima) দিন গঙ্গার ঘাটগুলিতে যে বিপুল জনসমাগম হবে, তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। বিশাল সংখ্যক ভক্তের সমাগমের কারণে প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে সকলের পূণ্যস্নান (Virtue) সম্পন্ন হয়।

আরও পড়ুনঃ West Bengal Budget 2025: জনমুখী হবে না বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট?

ভোরের আলো ফোটার আগেই সাধু-সন্ত, তীর্থযাত্রী ও সাধারণ ভক্তরা দলে দলে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে (যেখানে গঙ্গা, যমুনা এবং পৌরাণিক সরস্বতী নদীর মিলনস্থল) পৌঁছাতে শুরু করেন। শাস্ত্র অনুযায়ী, মাঘী পূর্ণিমার দিনে গঙ্গাস্নান করলে আত্মশুদ্ধি (Self-Purification) হয় এবং পুণ্যলাভ (Virtue) করা যায়। সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীরাও দল বেঁধে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। কেউ কেউ ভক্তদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান প্রচার করছেন, আবার কেউ নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। বহু ভক্ত এই পূর্ণিমায় পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ ও দান-ধ্যান করছেন। এক ভক্ত বলেন, ‘আমি প্রতিবছর মাঘী পূর্ণিমায় গঙ্গাস্নান করি। এটি শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং আমার আত্মার শান্তি লাভের মাধ্যম।’

মাঘী পূর্ণিমা (Maghi Purnima) উপলক্ষে পবিত্র স্নানের জন্য কুম্ভমেলায় (Mahakumbh) বিশাল সংখ্যক মানুষের সমাগম হওয়ায় প্রশাসন আগেভাগেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পুলিশের পাশাপাশি, এনডিআরএফ (NDRF), র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF) এবং জলপথে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়াগরাজের জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ভক্তদের সুরক্ষাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। স্নানঘাটগুলিতে অতিরিক্ত জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দিষ্ট গেট স্থাপন করা হয়েছে, যাতে বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।’

বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

✅ ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরা: মেলার পুরো এলাকা নজরদারির জন্য ২৪ ঘণ্টা ড্রোন ক্যামেরা ও সিসিটিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
✅ পুলিশ বাহিনীর মোতায়েন: পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
✅ চিকিৎসা শিবির: ভক্তদের জরুরি চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
✅ সিনিয়র সিটিজেনদের সহায়তা: প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ভক্তদের জন্য বিশেষ সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

নিউজ পোল ফেসবুক পোস্টের লিঙ্ক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

পবিত্র স্নানের পাশাপাশি, বিভিন্ন মন্দিরে চলছে বিশেষ পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বহু স্থানে আয়োজিত হয়েছে যজ্ঞ, ধর্মীয় আলোচনা ও ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান। বিভিন্ন ধর্মীয় গুরু ও সাধুসন্তরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে ভক্তদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তুলছেন। এক সাধুবাবা বলেন, ‘মাঘী পূর্ণিমা কেবল একটি দিন নয়, এটি আত্মশুদ্ধির উপলক্ষ। এই দিনে স্নান করা মানে ভগবানের আশীর্বাদ লাভ করা।’ মহাকুম্ভ মেলায় শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, বরং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনও রয়েছে। মেলাতে নানা রকম প্রসাদ, ধর্মীয় সামগ্রী ও হস্তশিল্পের দোকান বসেছে।

মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে এদিন কুম্ভমেলায়:

✅ গীতাপাঠ ও ভাগবত কীর্তন: বহু স্থানে গীতাপাঠ ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাকীর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
✅ যজ্ঞ ও হোমযজ্ঞ: পবিত্র যজ্ঞ ও বিশেষ হোমযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে ভক্তরা অংশগ্রহণ করতে পারেন।
✅ নিঃশুল্ক প্রসাদ বিতরণ: বিভিন্ন আশ্রম ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ভক্তদের জন্য বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে

আরেকজন বলেন, ‘আমি প্রথমবার মহাকুম্ভে এসেছি, সত্যি বলতে এত বড় আয়োজন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে আমি অভিভূত। প্রশাসনের দিক থেকেও যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে।’মাঘী পূর্ণিমার দিন মহাকুম্ভ মেলা (Mahakumbh) শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন। ভক্তদের বিপুল উপস্থিতি, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ধর্মীয় উন্মাদনা সব মিলিয়ে প্রয়াগরাজের (Prayagraj) এই পূণ্যতিথি সত্যিই এক অনন্য ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে রইল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধরনের জনসমাগমের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে ভক্তরা নির্বিঘ্নে তাঁদের ধর্মীয় রীতি পালন করতে পারেন।