Valentine’s Day: হে প্রেম! তুমি কেন এমন?

অফবিট ক্রিকেট ক্রীড়া

শুভম দে: হালকা শীতের আমেজ মেখে বাতাসে বসন্ত আর দিনটা প্রেমের (Valentine’s Day)। এমন দিনে (Valentine’s Day) কি আর হৃদয়ভঙ্গের কথা শুনতে কারো ভাল লাগে? কিন্তু ঐ যে প্রেম থাকলেই বেদনা থাকবে, তাকে হারানোর ভয় থাকবে, আর থাকবে ট্র্যাজেডি(Tragedy)। নাহলে আবার প্রেম কিসের! তুমি সত্য! তুমি সুন্দর! কিন্তু হে প্রেম কখন কখন তুমি যে শুধুই মধুর ন‌ও। তোমার মাধুর্যের আড়ালেও যে লুকিয়ে থাকে ট্র্যাজিক (Tragic) ইতিহাস! সর্বোপরি আজকের এই প্রেম দিবসের (Valentine’s Day) পিছনেও যে লুকিয়ে আছে এক করুন ভালবাসার গল্প। তাই আজ (Valentine’s Day) বরং শোনা যাক এক ট্র্যাজিক প্রেমের (Love) আখ্যান। যে প্রেম বিশ্বাসভঙ্গের। যে প্রেম বিষাদের।

বব উলমারের (Bob Woolmer) রহস্যজনক মৃত্যু, বেন স্টোকসের (Ben Stokes) মাতলামি থেকে ম্যাচ ফিক্সিং (Match Fixing ) — এরকম নানান ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেট (Cricket)। কিন্তু লেসলি হিলটন (Leslie Hylton) যে কান্ড ঘটিয়েছিলেন তার সাথে কি অন্য কোন ঘটনার তুলনা চলে? কারণ ম্যাচ ফিক্সিং বা মদ্যপান করে কলহ নয়, তাঁর অপরাধ ছিল আরও বড়ো, আরও কুখ্যাত। যার কারণে ফাঁসি (Death Sentence) অবধি হয়েছিল তাঁর এবং ক্রিকেটের ইতিহাসে ফাঁসিতে ঝোলা একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসাবে বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি।

১৯০৫ সালের ২৯ মার্চ জামাইকাতে (Jamaica) জন্ম হয় লেসলি জর্জ হিলটনের (Leslie George Hylton)। টেস্ট অভিষেক ঘটে ৩০ বছর বয়সে, ইংল্যান্ডের (England) বিপক্ষে। প্রথম ৩ টেস্টে নিলেন ১৩ টি উইকেট নিয়ে শুরুটা দারুণ করলেও চতুর্থ টেস্টে কোন‌ও উইকেট না পাওয়ায় বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। চার বছর পরে আবার ইংল্যান্ড সফরে দলে জায়গা পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই সিরিজের প্রথম ২ টেস্টে মাত্র তিন উইকেট নিলে বাকি সিরিজের জন্য তো বটেই, এমনকি জাতীয় দলের (West Indies) দরজা‌ও পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর জন্য। ছয় টেস্টে উইকেট সংখ্যা মাত্র ১৬ ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে (First Class Cricket) ১২০ টি উইকেট ছিল তাঁর ঝুলিতে। ক্রিকেটের বাইশ গজে খুব একটা আহামরি ছিলনা তাঁর পারফরম্যান্স। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়ার পরেই তাঁর জীবন বাঁক নিতে থাকলো এক ট্র্যাজিক সমাপ্তির (Tragic End) দিকে।

আরও পড়ুন: Valentine’s Day: একজনের মৃত্যুদিবসই হয়ে উঠল প্রেম দিবস!

ক্রিকেট ছাড়ার পরে সরকারি চাকরি করা শুরু করেন হিলটন। আর এইসময়েই তাঁর পরিচয় হয় জামাইকার পুলিশ ইনস্পেক্টরের মেয়ে লার্লিন রোজের (Lurline Rose) সাথে। এরপর প্রেম।স্বাভাবিকভাবেই দুই পরিবারের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক তাই হিলটনের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে একেবারেই রাজি ছিলেন না লার্লিনের বাবা। কিন্তু যাইহোক শেষ অবধি ১৯৪২ সালে বিয়েটা হয় লার্লিন আর হিলটনের এবং ১৯৪৭ সালে এক সন্তানও হয় তাঁদের, যার নাম ছিল গ্যারি। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু লার্লিন আর হিলটনের গল্পটা ‘হ্যাপি এন্ডিং’ (Happy Ending) -এর বদলে ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়ে গেল। আর সেই কাহিনীতে হিলটন হয়ে গেলেন ট্র্যাজিক হিরো (Tragic Hero)।

আর‌ও পড়ুন: Kabir Suman: কবীর সুমনের প্রেমময় ভ্যালেন্টাইন্স পোস্ট, কে এই সৌমী বসু মল্লিক?

উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে লার্লিন ফ্যাশন ডিজাইনের একটি ব্যবসা শুরু করেন এবং ব্যবসায়িক কারণে প্রায়শয় যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হতো তাকে। সেখানে ১৯৫৪ সালে তার সাথে পরিচয় ঘটে রয় ফ্রান্সিস (Roy Francis) নামে একজন কুখ্যাত লম্পটের এবং খুব তাড়াতাড়িই তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন লার্লিন। আর এরপরের ঘটনা বিশ্বাসঘাতকতার, হাড়হিম করা প্রতিশোধের — যা কোন‌ও থ্রিলারকে‌ও (Thriller) হার মানায়।

এরপর হিলটনের কাছে বেনামী একটা চিঠি আসে একদিন। চিঠিতে রয় ফ্রান্সিসের সাথে তাঁর স্ত্রীর গোপন অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের (Illicit Affair) কথা লেখা ছিল। চিঠিটা পেয়ে সরাসরি স্ত্রী লার্লিনকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, লার্লিন পুরো ঘটনাটিকেই ভুয়ো বলে এড়িয়ে যান। তখনকার মতো স্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেন হিলটন। কিন্তু সন্দেহ যায় না তাঁর মন থেকে। আর কয়েকদিন পরেই তাঁর বিশ্বাসভঙ্গ হয়, যখন তিনি জানতে পারেন রয় ফ্রান্সিসকে চিঠি লিখছেন তাঁর স্ত্রী লার্লিন এবং একজন চাকরকে দিয়ে সেই চিঠি পোস্ট অফিসেও পাঠিয়েছে সে। একথা জানার সাথে সাথে পোস্ট অফিসে ছুটে যান হিলটন, কিন্তু পোস্ট অফিস থেকে জানানো হয়, কারোর ব্যক্তিগত জিনিস তাঁর হাতে দেওয়া সম্ভব নয়।

সত্যিটা না জানতে পেরে সন্দেহের বশে সেদিন রাতে আর‌ও একবার স্ত্রীকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন হিলটন। প্রথমদিকে অস্বীকার করলেও থাকতে না পেরে এবার ফুঁসে ওঠেন লার্লিন, পুরো ব্যাপারটা স্বীকার করে নেয় সে এবং সাথে সে বলে যে পরিবারের কথা না শুনে হিলটনের মতো নিচু শ্রেণীর একজনকে বিয়ে করাটা ছিল তার জীবনের বড় ভুল‌‌ এবং এখানেই থামে না সে, একের পর এক স্বীকার করে নেয় রয় ফ্রান্সিসের সাথে তার প্রেম আর শারীরিক সম্পর্কের (Physical Relationship) কথা।আর এরপরেই রক্ত উঠে যায় হিলটনের মাথায়। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পিস্তল বের করে পরপর গুলি চালাতে থাকেন। পরে জানা যায় সর্বমোট সাতটি গুলি করেছিলেন তিনি, গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় রিলোডও করেছিলেন একবার। স্ত্রীকে খুন (Murder) করার পর খুব শান্তভাবে স্থানীয় থানায় ফোন করে সব ঘটনা জানান তিনি এবং পুলিশ (Police) এসে গ্রেফতার (Arrest) করে তাঁকে।

আর‌ও পড়ুন: East Bengal vs DHFC: শেষ হ‌ইয়াও হ‌ইল না শেষ

এর পরের গল্পটা করুন। বেদনার। ১৯৫৪ সালের অক্টোবর মাসে বিচার শুরু হয় হিলটনের। তদন্তে জানা যায় লার্লিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জামাইকা ফেরার আগের দিন স্থানীয় মার্কেট থেকে পিস্তলটি কিনেছিলেন হিলটন। হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনও সংশয়ই ছিল না জুরিদের। তবে জুরি বোর্ড তাঁকে ক্ষমা করার ব্যাপারটিও সুপারিশ করেন বিচারকের কাছে। কিন্তু বিচারকের কাছে সেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। দোষী সাব্যস্ত হন হিলটন, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাঁকে। আপিলের পর আপিল হয়। কিন্তু আগের রায়ই বহাল থাকে সব জায়গায়। শেষ ভরসা ছিলেন জামাইকার গভর্নর (Governor of Jamaica), কিন্তু তিনিও ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানালে ফাঁসি (Hang) নিশ্চিত হয়ে যায় হিলটনের।

নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

১৯৫৫ সালের ১৭ মে, সকালে ফাঁসি কার্যকর হয় লেসলি হিলটনের! কাকতালীয়ভাবে সেদিনই বার্বাডোজের (Barbados) কেনসিংটন ওভালে (Kensington Oval) শুরু হয় অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies vs Australia) চতুর্থ টেস্ট (Test Cricket)। যেখানে ক্যারিবিয়ান ওপেনার জন হোল্ট (John Holt) ভালো খেলতে না পারলে, মাঠে পোস্টার দেখা যায়, “হ্যাং হোল্ট, সেভ হিলটন।“ (Hang Holt, Save Hylton)

আর‌ও পড়ুন: IPL 2025: আইপিএলের শুরুতেই মেগা ক্ল্যাশ, নাইটদের মুখোমুখি বিরাটরা

প্রেম (Valentine’s Day) তুমি কেন এমন! কিন্তু প্রেম কবেই বা কার বাধা মেনে এসেছে? সে দুরন্ত। সে চঞ্চল। সে দ্রোহের ডাক দেয়। যেকোন সম্পর্কের মূল ভিত বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস যখন ভঙ্গ হয় প্রেম তখন হয়ে ওঠে প্রতিহিংসার। প্রেমের বদলে জন্ম নেয় ঘৃণা, হিংসা, জিঘাংসা। সব গল্পগুলোর হ্যাপি এন্ডিং হয়না। কিছু গল্পের শেষে চোখের কোণাটা চিকচিক করেও ওঠে। প্রেম করুন। বিশ্বাসে বাঁচুন। ভাল থাকুন।