Shiba Akashdeep Sabi: বিয়ে করলে কাজ বন্ধ! বলিউড নায়িকাদের প্রতি অদ্ভুত শর্ত ফাঁস করলেন শিবা

অফবিট বিনোদন

নিউজ পোল ব্যুরো : ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া করণ জোহরের (Karan Johar) ছবি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ (Racky Aur Rani Ki Prem Kahani) দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন রণবীর সিং (Ranbir Singh)ও আলিয়া ভাট(Alia Bhatt)। তবে এই ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেও নজর কাড়েন এক অভিজ্ঞ অভিনেত্রী শিবা আকাশদীপ সাবির (Shiba Akashdeep Sabi)। কিন্তু কেন তিনি হঠাৎ আলোচনায় এলেন? কারণ ছবিতে নব্বই ছুঁইছুঁই বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র তার গালে চুম্বন করেছিলেন! সেই দৃশ্য বেশ চর্চায় ছিল এবং শিবা নিজেও আনন্দ পেয়েছিলেন এই অভিজ্ঞতায়। তবে এবার তিনি এক অন্য কারণে খবরে উঠে এসেছেন।

এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলিউডে নায়িকাদের প্রতি হওয়া অবিচার নিয়ে তিনি মুখ খুলেছেন এবং তার বক্তব্য যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছে। শিবা আকাশদীপ সাবির ১৯৯১ সালে বলিউডে পা রাখেন সুনীল দত্ত পরিচালিত ছবি ‘ইয়ে আগ কাব বুজেগি’ দিয়ে। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন খ্যাতনামা তারকা সুনীল দত্ত এবং রেখা। তবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বলিউডে তার অভিজ্ঞতা সবসময় মসৃণ ছিল না। এবার সেই পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করলেন শিবা। বলিউডের নায়িকাদের প্রতি হওয়া বৈষম্য ও প্রযোজকদের অদ্ভুত শর্ত নিয়ে তিনি খোলাখুলি মন্তব্য করেছেন, যা আজকের যুগে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে একসময় স্বাভাবিক ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু ছিল না।’

এক মুম্বই সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে শিবা বলেন, ‘এখন সময় বদলেছে। কিন্তু আমাদের সময়ে নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু ছিল না। তাদের প্রেমিক থাকা চলত না, আর যদি প্রেম থাকত, তাহলে কাজ পাওয়া ছিল অসম্ভবের মতো।’ এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, ‘প্রযোজকরা তখন এমন শর্ত দিতেন যে, একজন অভিনেত্রী যদি বিয়ের কথা ভাবে, তাহলে তাকে কাজ দেওয়া হবে না! মা হওয়া তো দূরের কথা। এটা তখন স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। নায়িকাদের কেবলমাত্র দর্শকের জন্য ‘উপযুক্ত’ রাখতে চাওয়া হত, যেন তাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই।’

তবে এই অদ্ভুত নিয়মের পেছনে একটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন শিবা। তিনি মন্তব্য করেন, ‘নায়ক-নায়িকার রসায়ন বাস্তবের মতো লাগতে হবে।’ তৎকালীন প্রযোজক ও পরিচালকরা মনে করতেন, সিনেমায় নায়িকা যার সঙ্গে রোমান্স করছেন, দর্শক যেন সেটাকেই বাস্তব মনে করেন। শিবার ভাষায়, ‘নায়িকারা যাদের সঙ্গে রোমান্স করবেন, তাদের সম্পর্ক যেন সত্যি মনে হয়। দর্শক যেন মনে করেন, ওদের মধ্যে সত্যিই প্রেম আছে। যদি বাস্তবে নায়িকার অন্য কোনো প্রেমিক থাকত, তাহলে এই ‘বাস্তব’ আর দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য লাগত না। সেই কারণেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক রাখার ওপর একরকম নিষেধাজ্ঞা ছিল।’

বলিউডে এমন অদ্ভুত নিয়মের মধ্যেও অনেক অভিনেত্রী নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। শিবা তাদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘তবে অনেকেই এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ, তাদের জন্যই আজকের নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীরা অনেক বেশি স্বাধীন।’ আজকের যুগের অভিনেত্রীদের সঙ্গে সেই সময়ের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘এখনকার নায়িকারা প্রেম করছেন, বিয়ে করছেন, এমনকি মা হচ্ছেন—তবুও তাঁদের ক্যারিয়ার থেমে যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের সময়ে এটা কল্পনাও করা যেত না।’ শিবার এই বিস্ফোরক বক্তব্য বলিউডের পুরনো নিয়ম ও সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে অনেককে।

শিবার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বলিউডে অভিনেত্রীদের জন্য সময় এখন অনেকটাই বদলেছে। বর্তমানে অনেক অভিনেত্রী বিয়ে করেও ক্যারিয়ার চালিয়ে যাচ্ছেন, সন্তান নেওয়ার পরেও তারা অভিনয় করছেন এবং দর্শকের কাছেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। করণ জোহরের মতো অনেক পরিচালক এখন আর অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা ঘামান না। আলিয়া ভাট, অনুষ্কা শর্মা, দীপিকা পাড়ুকোন, করিনা কাপুর খান—এরা প্রত্যেকেই বিয়ের পরও ক্যারিয়ার সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিবার মতো অভিনেত্রীরা অতীতে যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছেন, তা আজও বলিউডের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে।

শিবা আকাশদীপ সাবিরের এই বক্তব্য বলিউডের অন্ধকার দিকের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। এক সময় বলিউডের নায়িকাদের জীবনের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকত ও তাদের কী ধরনের শর্ত মেনে চলতে হত, তা আজকের প্রজন্মের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এই ধারা বদলেছে। এখন নায়িকারা শুধুমাত্র পুরুষ তারকাদের ছায়ায় নয়, বরং নিজেদের যোগ্যতায়, প্রতিভায় ও ব্যক্তিত্বে সফল হয়ে উঠছেন। বলিউড বদলেছে, কিন্তু সেই লড়াইয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবেন শিবার মতো অভিজ্ঞ অভিনেত্রীরা, যারা একসময় এই কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।