বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: ১৯৭৫ সালে পুরুষদের ক্রিকেটে (Men’s Cricket) প্রথম বিশ্বকাপ (ICC World Cup) চ্যাম্পিয়ন হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর ৪ বছর পর ফের তারা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। আর তার ৪ বছর পর ১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে নিল কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। মোটামুটি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই ধারাই চলে এসেছে। সেই সময় একমাত্র বহুজাতিক প্রতিযোগিতা ছিল বিশ্বকাপ। যা হত ৪ বছর অন্তর। মাঝেসাঝে যে বেনসন এন্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ (১৯৮৫) কিংবা হিরো কাপের (১৯৯৩) মত প্রতিযোগিতা হয়নি তা নয়। তবে বিশ্বকাপের তুলনায় সেসব একাধারে যেমন ছিল নগণ্য তেমনিই তাদের প্রাসঙ্গিকতাও ছিল আলাদা আলাদা।
আরও পড়ুনঃ Greenstone Lobo: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতবে ভারত? কী বলছেন বিখ্যাত জ্যোতিষী?
বুধবার থেকে শুরু হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy)। ১৯৯৮ সালে এই প্রতিযোগিতা প্রথমবার আয়োজিত হওয়ার সময় যার নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি। সে সময় শুধুমাত্র নকআউট ফরম্যাটেই খেলা হত এই প্রতিযোগিতা। আর এটিই ছিল বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয় আইসিসি ইভেন্ট। যা আয়োজিত হত দু’বছর বাদে বাদে। তবু এখনকার মতো ঘিঞ্জি ব্যাপারটা যেন তখনও ছিল না।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়টার কথা বলা যেতে পারে। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফি হয়েছিল বাংলাদেশে। এরপর ১৯৯৯ সালে ওডিআই বিশ্বকাপ হয় ইংল্যান্ডে। ২০০০ সালে ফের নকআউট ট্রফি কেনিয়ায়। এরপর ২০০১ সালে কোনো প্রতিযোগিতায় আয়োজন করেনি আইসিসি। তবে এরপর ২০০২ থেকে ২০০৪, এই তিন বছরে ফের দুবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। এরপর ২০০৫ সালেও পুরুষদের ক্রিকেটে কোন আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়নি। তবে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ওডিআই বিশ্বকাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup) হয়েছে।
মূলতঃ বলা যেতে পারে এই সময় থেকেই ক্রিকেটে (Cricket) ঘিঞ্জি ব্যাপারটা শুরু হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচনার মাধ্যমে আইসিসি নতুন একটি প্রতিযোগিতা চালু করার পর থেকেই প্রায় প্রতিবছরই কোনো না কোনো আইসিসি ইভেন্ট হচ্ছে। ইদানিং আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও (World Test Championship) চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন কোনো বছরই আর ফাঁকা থাকছে না। কথা হচ্ছে, এতে কি কোনোভাবে বিশ্বকাপই গুরুত্ব হারাচ্ছে না?
নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
এ কথা ঠিক যে, বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনায় কোনো প্রতিযোগিতাই আসে না। আর ক্রিকেটে (Cricket) এই মুহূর্তে দু’ধরনের বিশ্বকাপ চালু। ৫০ ওভারের এবং ২০ ওভারের। তবে ঐতিহ্যের বিচার করলে ৫০ ওভারের ওডিআই বিশ্বকাপের ধারেকাছেও আসে না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু দিনের শেষে দুটোই তো আইসিসি প্রতিযোগিতা। আর কোনো দল যেকোনো একটি আইসিসি প্রতিযোগিতা জিততে পারলেই নিজেদের ধন্য মনে করে। সেখানে প্রতিবছরই সুযোগ থাকছে কোনো না কোনো বড় ট্রফি জেতার। এতে কি সত্যি সত্যিই গুরুত্ব হারাচ্ছে না বিশ্বকাপ?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সম্মানের বিচারে ওডিআই বিশ্বকাপের সমতুল্য না হলেও একদিনের ক্রিকেটে (ODI Cricket) এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। এমনকি যেহেতু শুধুমাত্র ৮টি সেরা দলই খেলে, তাই একে বিশ্বকাপের থেকেও কঠিন প্রতিযোগিতা মনে করেন অনেকে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা মাত্র ১০ হওয়ায় আটদলীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সঙ্গে ফারাকটা অনেকটা কমে এসেছে। এতেও কি গুরুত্ব হারাচ্ছে না ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ? কিংবা দু’বছর অন্তর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। যা হালে চালু হলেও ক্রিকেটের সব থেকে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটের কাছে পাত্তা পাওয়ার কথা নয় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেরও। এখনো পর্যন্ত ২০৩১ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ পর্যন্ত সূচি ঘোষণা করা হয়েছে আইসিসির তরফে। কে জানে তারপর আর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ দেখতে পাবে কি না ক্রিকেটবিশ্ব?