নিউজ পোল ব্যুরো: প্রকৃতির সৌন্দর্য অসীম, আর তারই এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত হলো মেরুজ্যোতি (Aurora)। রাতের আকাশে যখন আলোর নৃত্য দেখা যায়, তখন সেটি এক অভূতপূর্ব দৃশ্য হয়ে ওঠে। এটি মূলত পৃথিবীর উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলোতে (high-latitude regions) দেখা যায়, বিশেষ করে নরওয়ে (Norway), সুইডেন (Sweden), ফিনল্যান্ড (Finland), কানাডা (Canada), গ্রীনল্যান্ড (Greenland), রাশিয়া (Russia), নিউজিল্যান্ড (New Zealand) এবং অ্যান্টার্কটিকা (Antarctica) থেকে। সূর্য (Sun) প্রতিনিয়ত নিউক্লিয়ার ফিউশন (Nuclear Fusion) ঘটিয়ে প্রচণ্ড শক্তি উৎপন্ন করে, যার ফলে সৌর বিকিরণ (Solar Radiation) চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিকিরণের সঙ্গে চার্জযুক্ত কণা বা সৌর বায়ু (Solar Wind) প্রবাহিত হয় মহাকাশে। তবে সৌর ঝড় (Solar Storm) চলাকালীন এর তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:- Mount Everest: পৃথিবীর গোপন পর্বতের সন্ধান! জানেন কোথায়?
পৃথিবীর ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্র (Earth’s Magnetic Field) সাধারণত এই চার্জিত কণাগুলোকে আটকে রাখে, যাতে তারা সরাসরি আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু মেরু অঞ্চলে (Polar Regions) চৌম্বক বলরেখা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় কিছু চার্জিত কণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। তখন এই কণাগুলো বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পরমাণুর (Atmospheric Gases) সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়, যার ফলে আলো বিচ্ছুরিত হয় এবং আকাশে অসাধারণ মেরুজ্যোতি (Aurora) তৈরি হয়। মেরুজ্যোতির(Aurora) রঙ নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলের কোন উচ্চতায় এবং কোন গ্যাসের পরমাণুর সঙ্গে সৌর কণাগুলোর সংঘর্ষ হচ্ছে তার উপর। সবুজাভ-হলুদ (Green-Yellow Aurora) : মূলত অক্সিজেন পরমাণু (Oxygen Atoms) থেকে সৃষ্টি হয়, যা সাধারণত ১০০-২০০ কিমি উচ্চতায় দেখা যায়। নীল বা বেগুনি (Blue or Purple Aurora) : এটি নাইট্রোজেন পরমাণু (Nitrogen Atoms) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং সাধারণত ৯০ কিমি বা তার নিচে উৎপন্ন হয়। লাল (Red Aurora) : এটি উচ্চমাত্রার অক্সিজেন পরমাণুর (High-altitude Oxygen) কারণে হয়ে থাকে এবং ২৫০ কিমি বা তারও বেশি উচ্চতায় দেখা যায়। মেরুজ্যোতি প্রধানত উত্তর মেরুতে (North Pole) “অরোরা বোরিয়ালিস” (Aurora Borealis) নামে পরিচিত এবং দক্ষিণ মেরুতে (South Pole) একে বলা হয় “অরোরা অস্ট্রালিস” (Aurora Australis)। সাধারণত শীতকালে (Winter) এবং মেঘমুক্ত আকাশে (Clear Sky) মেরুজ্যোতি ভালোভাবে দেখা যায়। তীব্র সৌরঝড়ের পর এটি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এমনকি অনেক সময় মেরু অঞ্চলের বাইরেও দেখা যেতে পারে।

নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:- https://www.facebook.com/share/164mWXbsyp/
একবার যদি কেউ নরওয়ের ট্রমসো (Tromsø, Norway) বা আলাস্কার (Alaska) কোনো নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকায়, তবে এক অপার্থিব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারবে। কখনো সবুজ, কখনো বেগুনি বা লাল আভায় আলোকিত হয়ে ওঠে সমগ্র আকাশ। বিজ্ঞান যেমন এর রহস্য ব্যাখ্যা করে, তেমনি এটি প্রকৃতির এক চমৎকার শিল্পকর্মও বটে।মেরুজ্যোতি(Aurora) শুধুমাত্র এক বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, এটি প্রকৃতির এক অপূর্ব প্রদর্শনী। যারা সত্যিই এই আলো খেলা দেখতে চান, তাদের জন্য এটি এক জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। যদি কখনো সুযোগ হয়, তবে উত্তর ইউরোপ বা অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন, কারণ একবার মেরুজ্যোতির মোহময় রূপ দেখলে সেটি আজীবন মনে গেঁথে থাকবে।