নিউজ পোল ব্যুরো: বিশ্বব্যাপী মহামারী বা সংক্রমণ একটি বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত কোভিড-১৯ (COVID-19) পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে যেকোনো নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এমনই একটি ভাইরাস হলো বার্ড ফ্লু (Bird Flu Virus), যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং ভারতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো, বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাসটি কীভাবে বিস্তার লাভ করছে, এবং এটি মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। যদিও এই ভাইরাস মানুষের জন্য এখনও তেমন ক্ষতিকর নয় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তবে তার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া, বিশেষ করে পোলট্রি ফার্মের মাধ্যমে, অনেকেই সন্দিহান হয়ে উঠে।
আরও পড়ুনঃ Bangladesh: বাল্য বিবাহে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ, ধারেকাছে নেই ভারত
বার্ড ফ্লুর বিস্তার এবং এর প্রভাব:
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বার্ড ফ্লু (Bird Flu Virus) ছড়িয়ে পড়ার খবর এসেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, এবং বোকারোর পোলট্রি ফার্মগুলোতে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এক পর্যায়ে, আক্রান্ত পাখির মাধ্যমে ভাইরাসটি বিড়ালের শরীরেও প্রবেশ করেছে, যা ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা এবং তার আশঙ্কাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, শুধু পোলট্রি বা পাখির সংস্পর্শে আসা থেকেই নয়, বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাসের কণাও মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে, ভাইরাসটি বৃহত্তর এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বাতাসে ভাসমান ভাইরাস শনাক্তকরণ যন্ত্রের উদ্ভাবন:
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের (Bird Flu Virus) বিস্তার রোধ করতে নানান নতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির (American Chemical Society) বিজ্ঞানীরা এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন, যা বাতাসে ভাসমান ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সহজেই জানিয়ে দিতে পারবেন, কোন এলাকায় ভাইরাসের উপস্থিতি কতটা এবং কত দূর পর্যন্ত তা ছড়াচ্ছে।
এটি একটি বিশেষ ধরনের ইলেকট্রোকেমিক্যাল ক্যাপাসিটিভ বায়োসেন্সর (electrochemical capacitive biosensor) যা বাতাসের কণায় মিশে থাকা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। এটি ন্যানোক্রিস্টাল (nanocrystal) এবং গ্রাফিন অক্সাইড (graphene oxide) দিয়ে তৈরি একটি সূক্ষ্ম স্তর ধারণ করে, যা বাতাসের কণাকে শনাক্ত করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি, কার্বন ইলেকট্রোড (carbon electrode) এর উপরে বসানো হয়ে, বাতাসে ভাসমান জলকণা, ধূলিকণা বা অন্যান্য জীবাণু শনাক্ত করতে পারে। এমনকি এটি বাতাসে ভেসে থাকা বার্ড ফ্লু ভাইরাস (H5N1) সনাক্ত করতেও সক্ষম।
ভাইরাসের মিউটেশন এবং তার বিপদ:
বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের (Bird Flu Virus) মধ্যে কিছু ভয়াবহ পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। বিশেষত এইচ৫এন১ (H5N1) ভাইরাসের মধ্যে জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন (mutation) ঘটছে, যার ফলে ভাইরাসটি আরও সংক্রামক হয়ে উঠছে। পূর্বে, এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে আক্রান্ত হওয়ার জন্য সরাসরি পাখির সংস্পর্শ প্রয়োজন ছিল। তবে বর্তমানে, এই ভাইরাসটি বাতাসে ভাসমান কণায় মিশে বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। এর ফলে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
এছাড়াও, এইচ৭এন৯ (H7N9) নামের একটি ভাইরাসের প্রজাতিও সংক্রমণ ঘটানোর জন্য মিউটেশন করে নতুন নতুন রূপ ধারণ করছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যেহেতু ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন ঘটছে, তাই এটি মানুষের জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই কারণে, বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের গতিপথ এবং তার বিস্তার চিহ্নিত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
ভবিষ্যতে কী প্রতিকার হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হলে নিয়মিত মনিটরিং এবং নজরদারি জরুরি। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাতাসে ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করা সহজ হলে, তা ভাইরাসটি ছড়ানোর গতিপথ দ্রুত নির্ধারণে সাহায্য করবে। পোলট্রি ফার্ম, পাখি, এবং মানুষের সংস্পর্শে আসা অঞ্চলে সতর্কতা বৃদ্ধি করে এই ভাইরাসের বিস্তার কমানো সম্ভব হবে।
নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
এছাড়া, ভাইরাসের নতুন রূপ এবং মিউটেশন সম্পর্কেও অধিক গবেষণার প্রয়োজন, যাতে এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটানোর আগেই এর কার্যকারিতা এবং বিস্তার বন্ধ করা সম্ভব হয়। বার্ড ফ্লু (Bird Flu) বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza) একটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, যেমন ইলেকট্রোকেমিক্যাল বায়োসেন্সর, এর বিস্তার শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সক্ষম হওয়া যাবে এবং একে মহামারি রূপ নেওয়ার আগেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।