শুভম দে: ইডেনের (Eden Gardens) পিচ কিউরেটর রাজস্থান বনাম কেকেআর (RR vs KKR) ম্যাচ দেখলেন কি? দেখলেন কি স্পিন ট্র্যাক পেলে নাইটরা (KKR) কি করতে পারে? আর দেখলেন কি সবসময় হাইরোড মার্কা উইকেটে চার-ছয়ের বন্যাই টি-২০ নয়? বরং ব্যাটে-বলে তুল্যমূল্য লড়াইয়েই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের (T20) আসল মজা। বঙ্গ ক্রিকেট সংস্থার (CAB) পিচ প্রস্তুতকারক (Pitch Curator) সুজন মুখোপাধ্যায় মানুন বা না মানুন এটাই সত্যি বলে মনে করেন ‘জেন জি’ (Zen Z)। ইডেন এখন নামেই নাইটদের ঘরের মাঠ। ঘরোয়া পরিবেশের কোন সুযোগ সুবিধাই পায়না কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) তাদের ঘরের মাঠে। ভুলে গেলে চলবে না বরাবরই নাইটদের প্রধান অস্ত্র স্পিন। আর যে অস্ত্রেই বুধবার পিঙ্ক আর্মিদের (Rajasthan Royals) ঘায়েল করে মরশুমের (IPL 2025) প্রথম জয় তুলে নিল শাহরুখের (SRK) দল।
আরও পড়ুন: KKR : হার দিয়ে শুরু! ‘শাপে বর’ নাইটদের জন্য?
এদিন (RR vs KKR) টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন অজিঙ্ক রাহানে। কিন্তু প্রথম একাদশ দেখেই মাথায় হাত নাইট সমর্থকদের। সুনীল নারিন নেই সেই দলে। অধিনায়ক জানালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকার শরীর ভাল নেই। তাই বদলে এলেন মইন আলি। একেই উদ্বোধনী ম্যাচে আরসিবির বিরুদ্ধে হেরে চাপ বাড়ছিল নাইট শিবিরে। যেভাবে হোক জয়ে ফিরতেই হয় তাদের। তার উপর আবার প্রধান দুই সৈন্যের একজন নেই! (আরেকজন আন্দ্রে রাসেল) কিন্তু বোলিংয়ে নারিনের অভাব বুঝতেই দিলেন না বরুণ-মইনরা। ভাল শুরু করেও নাইটদের পাতা স্পিন ফাঁদে একের পর এক ধরা দিলেন রাজস্থান ব্যাটাররা। অসহায়ভাবে যা দেখলেন স্যার দ্রাবিড়।

তবে শুধু বরুণ-মইন নয়, দুটি করে উইকেট নিলেন পেসার বৈভব আরোরা এবং হর্ষিত রানাও। স্পেন্সার জনসন তুলনামূলক বেশি রান খরচ করলেও এক উইকেট নেন। এদিন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন উইকেট রক্ষক ধ্রুব জুরেল। যদিও তা টি-২০ সুলভ নয় একেবারেই। কিন্তু দল একের পর এক উইকেট হারাতে থাকায় তাঁর করারও কিছু ছিল না। প্রাক্তন নাইট অলরাউন্ডার নিতীশ রানাও এদিন ডাহা ফেল করেন। ৯ বলে মাত্র ৮ রান করে মইন আলির বলের লাইন বুঝতে না পেরে যেভাবে বোল্ড হলেন তা কোচ দ্রাবিড়কে লজ্জায় ফেলবে! বুধবার আঁটোসাঁটো বোলিং করলেন নাইটদের দুই স্পিনারই। চার ওভার বল করে মইন আলি খরচ করেন ২৩ রান আর বরুণ ১৭ রান। প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ (RR vs KKR) অর্ধেক পকেটে চলে আসে নাইট রাইডার্সের।

দ্বিতীয় ইনিংসে (RR vs KKR) ব্যাট করতে নেমে একেবারেই তাড়াহুড়ো করেনি চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের দল। এদিন নারিনের পরিবর্তে কুইন্টন ডি ককের সঙ্গী হন ইংলিশ অলরাউন্ডার মইন আলি। কিন্তু প্রোটিয়া উইকেট রক্ষকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে মাত্র ৫ রান করে ফিরতে হয় তাঁকে। যদিও ১২টি বল খেললেও খুব একটা ছন্দে দেখা যায়নি তাঁকে। ঠিকঠাক ব্যাটে বলে হচ্ছিল না তাঁর। কিন্তু শুরু থেকে শেষ নাইটদের ইনিংস একার হাতেই টানলেন কুইন্টন ডি কক। না অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ শট খেললেন, না অতিরিক্ত বল খেললেন। আটটি বাউন্ডারি ও ছ’টি ওভার বাউন্ডারি মারলেন। প্রয়োজনে শর্ট রান নিলেন। সবকিছুর সংমিশ্রণে ৬১টি বল খেলে করলেন ৯৭ রান। তিন রানের জন্য তৃতীয় আইপিএল সেঞ্চুরি এল না ঠিকই কিন্তু পিকচার পারফেক্ট ইনিংসে অপরাজিত থেকে টিম পার্পল অ্যান্ড গোল্ডকে এনে দিলেন এই মরশুমের প্রথম জয়।

যোগ্য সঙ্গ দিলেন বছর কুড়ির অঙ্গকৃশ রঘুবংশী। ৮৩ রানের অপরাজিত জুটি গড়লেন দুজনে। এখানেই অন্য আর পাঁচটা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে ফারাক কেকেআরের। টিমে রাসেল, রিঙ্কু, ভেঙ্কটেশ আইয়ারদের মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা থাকা সত্ত্বেও চারে এলেন রঘুবংশী। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ম্যাচ শেষ করার জন্য দলে বিগ হিটার থাকলে তাদেরকেই পাঠাতো কিন্তু এভাবেই তরুণ খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়িয়ে এসেছে কেকেআর। তৈরি করেছে তাদের। পরবর্তীকালে যারা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন বিভিন্ন দেশে। এদিন ৬ মেরে ম্যাচ জেতালেন ডি কক। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে নাইটদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। ১৫ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটে রাজস্থানকে হারিয়ে জয়ের সরণীতে ফিরল কেকেআর। পয়েন্ট তালিকায় উঠে এল ষষ্ঠ স্থানে। সুজন বাবু দেখছেন কি?
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের লিংক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=JOUm2-bcHPZ3xnNR
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজস্থান রয়্যালস ১৫১/৯ (২০)
ধ্রুব জুরেল ৩৩(২৮)
বরুণ চক্রবর্তী ২/১৭(৪), মইন আলি ২/২৩(৪)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৫৩/২ (১৭.৩)
কুইন্টন ডি কক ৯৭(৬১)*, অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ২২(১৭)*
ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গা ১/৩৪ (৩)
কলকাতা নাইট রাইডার্স জয়ী ৮ উইকেটে