শুভম দে: এ যেন বিখ্যাত মার্কিন টিভি সিরিজ ‘দ্য গুড ডক্টর’ (The Good Doctor) -এর প্রথম দৃশ্য। যেখানে দেখা গিয়েছিল সিরিজের প্রধান চরিত্র ফ্রেডি হাইমোর (Freddie Highmore) অভিনীত ‘ডঃ শন মুরফি’ (Shaun Murphy) বিমানবন্দরে হঠাৎ করে আহত হওয়া একটি কিশোরের প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার করে প্রাণ বাঁচান। সেই একই দৃশ্য এবার দেখা গেল ভূমিকম্প বিধ্বস্ত ব্যাঙ্ককে (Mayanmar Earthquake)। শুক্রবার ভূমিকম্পের সময় ব্যাংককের পুলিশ জেনারেল হাসপাতালের (Bangkok Police General Hospital) বাইরে সন্তানের জন্ম দিলেন এক মহিলা। কর্তব্যরত চিকিৎসক (Doctor) এবং নার্সরা (Nurse) বিপদের মুহূর্তে এতটুকুও বিচলিত না হয়ে পালন করে গেলেন নিজেদের দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: Myanmar Earthquake: মায়ানমারে ভয়াবহে ভূমিকম্পে মৃত ২০, বন্ধ গণপরিবহন পরিষেবা
শুক্রবার দুপুরে, স্থানীয় সময় ১২:৫০ মিনিট নাগাদ মায়ানমার কেঁপে ওঠে ৭.৭ এবং ৬.৪ মাত্রার দু’দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে (Mayanmar Earthquake)। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাগাইংয়ের (North East Sagaing) কাছে। যার প্রভাবে কম্পন অনুভূত হয় থাইল্যান্ডের (Thailand) ব্যাংককেও (Bangkok)। ‘আফটার শক’ -এর অভিঘাতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। থাই সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর পুলিশ হাসপাতালটিতে কোনও নির্দিষ্ট ভূমিকম্প প্রতিরোধ পরিকল্পনা না থাকায়, হাসপাতালের কর্মীরা তড়িঘরি রোগিদের বাইরে নিয়ে আসেন। সেই সময়ই হাসপাতালের বাইরে স্ট্রেচারে শোয়া অবস্থায় সন্তান প্রসব করেন ঐ তরুণী।

বলা হয় সেবাই পরম ধর্ম। তসলিমা নাসরিন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘লজ্জা’ ‘র শুরুতেই লিখেছিলেন “ধর্মের অপর নাম হোক মানবতা।“ আজও পৃথিবীতে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায় বলেই হয়তো টিকে আছে এই সমাজ, এই পৃথিবী। আর একজন চিকিৎসক-নার্সের কাছে নিজের সবটুকু দিয়ে রোগীর সেবা করে যাওয়াই তার শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তারই নজির গড়লো ব্যাংককের পুলিশ হাসপাতাল। সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওই দেখা গিয়েছে চারিদিকে প্রাণ বাঁচাতে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু কর্তব্যে অবিচল ডাক্তার-নার্সরা একবারের জন্যও নিজেদের জীবনের কথা না ভেবে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলেন সন্তান সম্ভবা ঐ তরুণীকে ঘিরে। প্রয়োজনীয় যা কিছু করার করে গেলেন। এক অভূতপূর্ব মুহূর্তে সম্পূর্ণ নিরাপদে পৃথিবীর আলো দেখলো ছোট্ট একটি নতুন প্রাণ। সাফল্যের হাসি ছড়িয়ে পড়ে মেডিক্যাল টিমের মধ্যে। হাসপাতালের মুখপাত্র পুলিশ কর্নেল সিরিকুল শ্রীসাঙ্গা জানান মা ও শিশু উভয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

স্থানীয় সংবাদসূত্রে জানা গিয়েছে হাসপাতালটিতে ভূমিকম্প (Mayanmar Earthquake) পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে আগুন লাগলে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই একই পথ অবলম্বন করেন হাসপাতালের কর্মীরা। রোগীদের বাইরে বের করে ফাঁকা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসেন তারা। অবস্থা অনুযায়ী রোগীদের লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে রাখা হয়। সবথেকে মুমুর্ষ রোগিদের লাল জোনে রাখা হয়েছিল। হাসপাতালের বাইরেই চলে চিকিৎসা। স্থান-কাল না বিচার করে নিজেদের জীবনের পরোয়া না করেই কাজ চালিয়ে যান চিকিৎসক-নার্সরা। পরে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা গিয়ে হাসপাতাল বিল্ডিং পরীক্ষা করে দেখেন। তারপরেই রোগীদের ফেরানো হয় হাসপাতালে। মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। আশঙ্কা যে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। প্রকৃতির রোষে মানুষ বড়ই অসহায়। সেখানে হাত নেই কারোর। কিন্তু মানুষের বিপদে আজও মানুষই পারে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মানুষকে বাঁচাতে। তাই হয়তো এই পৃথিবীর মরা ঘাসে আজও মুক্তির ফুল ফোটে।