Waqf property: ছিল জাদুঘর হয়ে গেল মসজিদ!

আন্তর্জাতিক দেশ রাজনীতি

নিউজ পোল ব্যুরো: বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ওয়াকফ (Waqf property) সংক্রান্ত বিতর্ক প্রবলভাবে আলোড়ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা এনডিএ জোটের অভিযোগ, ওয়াকফ বোর্ড দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি—যেমন ইডেন গার্ডেন্স, সংসদ ভবন বা তামিলনাড়ুর প্রাচীন চোল রাজবংশের নির্মিত মন্দিরগুলিকেও তাদের আওতাধীন সম্পত্তি হিসেবে দাবি করছে। যদিও এই অভিযোগ তীব্রভাবে খণ্ডন করেছে একাধিক মুসলিম সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি।

স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে ওয়াকফের (Waqf property) সম্পত্তি নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভারতেই শুধু নয়, এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে তুরস্কের ঐতিহাসিক হাইয়া সোফিয়া। এই ধর্মীয় স্থাপনাটি একাধিকবার নিজের পরিচয় বদলেছে—গির্জা থেকে মসজিদ, সেখান থেকে জাদুঘর, এবং ফের মসজিদে রূপান্তর। এর সম্পত্তি হস্তান্তর এবং ব্যবস্থাপনা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক লেগেই আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান হাইয়া সোফিয়ার স্থানে ছিল একটি গ্রিক-রোমান মন্দির, যেখানে ইউরোপীয় দেবতার উপাসনা হতো। পরে, চতুর্থ শতাব্দীতে ইউরোপে খ্রিস্টধর্ম বিস্তার লাভ করলে, ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে সেখানে নির্মিত হয় গির্জা ‘Magna Ecclesia’। কিন্তু স্থানীয় হিংসার জেরে গির্জাটি ধ্বংস হলে, ৪১৫ সালে তা আবার নির্মাণ করা হয়।

পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে গড়ে ওঠে । ষষ্ঠ শতকে সম্রাট জাস্টিনিয়ান নতুন করে হাইয়া সোফিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ আনথেমিয়াস অফ ট্র্যালেস এবং ইসিডোর অফ মিলেটাস গির্জার নকশা করেন। পাঁচ বছরের নির্মাণ শেষে, ৫৩৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজকীয় আড়ম্বরের মধ্যে গির্জার উদ্বোধন হয়। এর সুবর্ণ গম্বুজ এবং রুপোর কারুকার্য একে করে তোলে অদ্বিতীয়।
১৩৪৪ সালের ভূমিকম্পে আবার ধ্বংস হয় এই সৌধ। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে ১৪৫৩ সালে। মাত্র ২১ বছর বয়সে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ কনস্টান্টিনোপল দখল করেন এবং বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। গির্জাটি মসজিদে রূপান্তরিত হয় এবং তার নাম হয় “হাইয়া সোফিয়া”। তিনি ওয়াকফের (Waqf) মাধ্যমে মসজিদের সম্পত্তি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। ১৪৮১ সালে মসজিদের চারপাশে ছোট মিনার নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়। স্থানীয় বাজারের আয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ চলত। ১৯ শতকে যখন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সুলতান প্রথম আবদুলমেজ়িদ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। একে ঘিরে গড়ে ওঠে একটি মাদ্রাসাও। সংস্কারের জন্য মসজিদ কিছুদিন বন্ধ ছিল, তবে ১৮৪৯ সালে তা আবার সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃAnubrata Mondal: রাম নবমীর শোভাযাত্রা থেকে বিশেষ বার্তা অনুব্রতর

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, ১৯২৩ সালে মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামি শাসন থেকে বেরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যান তিনি। ১৯৩৪ সালে আতাতুর্ক হাইয়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন, যা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। ২০২০ সালে, তুরস্কের সর্বোচ্চ আদালত ১৯৩৪ সালের ডিক্রি বাতিল করে দেয়। রায়ে বলা হয়, ওয়াকফ ইসলামি আইনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং হাইয়া সোফিয়া ওয়াকফ সম্পত্তি। এই রায়ের পর প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগান দ্রুত একটি নতুন ডিক্রি জারি করেন এবং হাইয়া সোফিয়াকে ফের মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০২০ সালের ২৪ জুলাই, ৮৬ বছর পর, সেখানে আবার নামাজ পড়া হয়—তাতে অংশ নেন তুরস্কের শীর্ষ নেতৃত্ব।।

বর্তমানে হাইয়া সোফিয়া একটি হেরিটেজ সাইট। যদিও এটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে টিকিট ছাড়াই। তবে, এর যাবতীয় সম্পত্তি এখন ওয়াকফ (Waqf property) বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা আবার বিশ্ব জুড়ে বিতর্কের কারণ হয়ে উঠেছে।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT