রাইমা রায়: “শৃনু বৎস্য প্রবক্ষামী আদ্যাস্ত্রোতং মহাফলম”দক্ষিণেশ্বরের ঠিক কাছেই, এক পবিত্র ভূমিতে বিরাজমান এক অতিমানবীয় উপস্থিতি – দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার (Adya Shakti Mahamaya) আরাধ্য স্থান, আদ্যাপীঠ (Adyapeath Kali Temple)। এটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির (Famous Kali Temples of West Bengal) মধ্যে এক অনন্য নাম। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, অন্নদা ঠাকুর। তার আসল নাম ছিল অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য (Annadacharan Bhattacharya)। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সন্তান অন্নদা ঠাকুর কলকাতায় এসে আয়ুর্বেদ শিখতে শুরু করেন। আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বন্ধুর বাড়িতে থাকাকালীন, ঈশ্বরচিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন। ১৩২১ বঙ্গাব্দের এক রাত্রে, স্বপ্নে দেখা পান শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের (Sri Ramakrishna Paramhansa)। নির্দেশ আসে – ইডেন গার্ডেনসে গিয়ে এক নির্দিষ্ট স্থানে, ঝিলের ধারে থাকা নারকেল ও পাকুড় গাছের মাঝে খুঁজে বের করতে হবে এক মূর্তি। অন্নদা ঠাকুর সেই নির্দেশ পালন করেন এবং রামনবমীর দিন ১৮ ইঞ্চি দীর্ঘ কষ্টিপাথরের আদ্যা মা কালী মূর্তি (Adya Maa Kali Idol) উদ্ধার করেন।
আরও পড়ুন:- Birth Anniversary: শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ১৯০তম জন্মতিথি পালন
দেবীর অলৌকিক বার্তা
পরের রাতেই দেবী স্বপ্নে এসে বললেন, “কাল বিজয়া দশমী। তুমি আমায় গঙ্গায় বিসর্জন দাও।” ভীত অন্নদা ভাবলেন, মা রুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু মা তখন বলেন, “আমি শুধু নিয়ম মেনে পুজো চাই না, ভক্তের সহজ আন্তরিকতা চাই।” এরপর দেবী আদ্যাস্তোত্র (Adyastotra) আবৃত্তি করেন, যা অন্নদা ঠাকুর লিখে রাখেন। আজও সেই স্তোত্র পাঠ হয় আদ্যাপীঠে, প্রভাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

১৯১৫ সালে শুরু হয় আদ্যাপীঠের যাত্রা (Adyapeath Kali Temple) । ১৯৬৭ সালে নির্মিত হয় বর্তমান বিশাল মন্দির। প্রায় ২৭ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এই প্রতিষ্ঠানটিতে (Adyapeath Math Complex) কেবল দেবী আদ্যা নন, রয়েছেন ধ্যানস্থ রাধাকৃষ্ণ এবং শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তি। অন্নদা ঠাকুর বিশ্বাস করতেন, ধর্মের সঙ্গে সমাজকল্যাণের মেলবন্ধন থাকা উচিত। তাঁর পরিকল্পনায় ব্রহ্মচর্যাশ্রম (Brahmacharya Ashram) বালকদের জন্য, আর্য নারী শিক্ষাকেন্দ্র (Women’s Education Center) বালিকাদের জন্য, বাণপ্রস্থাশ্রম (Vanaprastha Ashram) গৃহস্থ সন্ন্যাসপ্রার্থীদের জন্য এবং হাসপাতাল ছিল সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য। আজ তাঁর ভাবনাগুলো পরিপূর্ণ বাস্তব। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে, পুরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহাপুরুষ। তবে তাঁর আদর্শে চলা শিষ্যরা আজও তাঁর প্রতিটি কথা পালন করে চলেছেন। আধুনিক যুগে তাঁর স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ— ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসালয় (Mobile Hospital) আজও রাস্তায় রাস্তায় সেবা পৌঁছে দেয়।

ভোগের অনন্য রীতি
আদ্যাপীঠে (Adyapeath Kali Temple) ভোগের ধরনই আলাদা। দেবীর জন্য সাড়ে ২২ সের চালের রান্না হয়, রাধাকৃষ্ণের জন্য ৩২.৫ সের এবং শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য ১২.৫ সের চাল। ভোগ হয় পঞ্চব্যঞ্জন ও পরমান্নে সমৃদ্ধ। তবে বড় ভোগ মন্দিরে নয়— পাশের ভোগালয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। আদ্যাকে নিবেদিত পরমান্নই সরাসরি মন্দিরে পৌঁছায়। রাতে ঘি ও উৎকৃষ্ট চালে তৈরি অমৃতভোগ (Amrit Bhog) নিবেদন করা হয়। যদি আপনি আদ্যাপীঠের ভোগ উপভোগ করতে চান, তবে কুপন কেটে নিতে হবে— ৬০ টাকায় পূর্ণ ভোজনের কুপন এবং ৩০ টাকায় অর্ধেক। কুপন পাওয়া যায় সকাল ৯টা থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত। ভোগ বিতরণ হয় সকাল ১১.৪৫ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, তবে সময় ভক্তদের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT
আদ্যাপীঠ যাওয়ার উপায় (How to Reach Adyapeath Kali Temple)
শিয়ালদহ (Sealdah) স্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বর (Dakshineswar) ট্রেনে নেমে অটো/টোটো/রিকশা করে সহজেই পৌঁছনো যায় মন্দিরে। এছাড়াও মেট্রো বা বাসেও দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে একই উপায়ে আসা যায় আদ্যাপীঠে।