নিউজ পোল ব্যুরো: নিজের স্বপ্ন (dream) পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল উনিশ বছরের যুবতী আরতি সাউ। চেয়েছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে, চাকরি (job) করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে। কিন্তু সমাজ ও পরিবার যখন মেয়েদের স্বপ্নকে বোঝে না, তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় রক্তের সম্পর্কও। আরতির জীবনেও ঘটেছে সেই নির্মম সত্য (Howrah Incident)। নিউ ব্যারাকপুরে (New Barrackpore) একটি অনলাইন সেলস কোম্পানিতে (online sales company) চাকরি পেয়ে খুশি ছিল সে। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিল পড়াশোনা। বর্তমানে সে বড়বাজারের (Bara Bazar) সাবিত্রী মহাবিদ্যালয়ে (Sabitri Mahavidyalaya) স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ট্রেনিংয়ের (training) জন্য ব্যারাকপুরে থাকতে শুরু করেছিল, কোম্পানির তরফে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল।
আরও পড়ুন:- Nawsad Siddique: ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কেমন আছেন ভাঙড়ের বিধায়ক?
তবে বাড়ির পরিবেশ ছিল ভিন্ন। বাবা গৌরা সাউ ও মা, মেয়ের এই অগ্রগতি মেনে নিতে পারেননি। পরিবারের ইচ্ছা ছিল, আরতির তাড়াতাড়ি বিয়ে (marriage) হোক। আরতি চাইছিল সময়—সে চেয়েছিল আগে নিজের পরিচয় তৈরি করতে, আত্মনির্ভর (self-dependent) হতে। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করায় তার ভাগ্যে জোটে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন (mental and physical abuse)। আরতির অভিযোগ, বারবার চাকরি ছাড়তে বলার পাশাপাশি চলতে থাকে চাপ ও হুমকি। একসময় পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, সে বাড়ি ছেড়ে ব্যারাকপুরে নিজের কর্মস্থলে চলে যায়। কিন্তু কয়েকদিনের জন্য হঠাৎ বাড়ি ফিরে এলে, সেই স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় তার কাছ থেকে। অভিযোগ, তাকে ঘরে আটকে রাখা হয়। সে যাতে বাইরে যেতে না পারে সে কারণে পায়ে পড়ানো হয় লোহার চেন ও তালা (chain and lock)। এমনকি তাকে টানা ১৫ দিন এভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে জানায় আরতি। তার ভাষায়, “বাবা শুধু বিয়ে দিতে চাইছিল। কাল তো ছেলেও দেখতে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই (Howrah Incident)।”
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT
স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পৌঁছয় পুলিশের কাছে। পুলিশ গিয়ে দ্রুত উত্তর হাওড়ার (Howrah Incident) ঘুসুড়ি থেকে উদ্ধার করে আরতিকে। তার মা-বাবাকেও থানায় ডেকে পাঠানো হয়। যদিও এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি এখনও। গৌরা সাউ অবশ্য স্বীকার করেছেন, মেয়েকে আটকে রাখার বিষয়টি ঠিক হয়নি। তাঁর কথায়, “ও শুধু পালিয়ে যেত। তাই আমরা কাজে যাওয়ার সময় আটকে রাখতাম। বিকেলে আবার খুলে দিতাম। চেন দিয়ে বেঁধে রাখা ঠিক হয়নি, এটা মানছি। কিন্তু ও টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যেত বলেই বাধ্য হয়েছিলাম।” পুলিশ সূত্রে খবর, আরতিকে আপাতত একটি নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে। সে পরিষ্কার জানিয়েছে—সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। ফিরতে চায় নিজের কাজের জায়গায়, যেখানে সে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে। এই ঘটনা শুধু একটি মেয়ে নয়, হাজারো তরুণীর লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। যেখানে সমাজ ও পরিবারের চাপে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে অজস্র স্বপ্ন, সেখানে আরতির মতো মেয়েরা একটুকরো আশার আলো। হয়তো অনেকেই তার এই সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হবে—স্বপ্ন দেখার, স্বপ্ন পূরণের।