Madhavi Latha : চিনে নিন IISc অধ্যাপক মাধবী লাথাকে, চেনাব ব্রিজ নির্মাণে রয়েছে যার ১৭ বছরের অবদান

দেশ প্রযুক্তি

নিউজ পোল ব্যুরো: ভারতের বুকে গড়ে ওঠা চেনাব রেল সেতু গোটা বিশ্বের কাছে বিস্ময়ের। শুক্রবার সেই রেল সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার উঁচু সেতু দিয়ে ছুটেছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। চেনাব নদীর জলস্তর থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মাণের নেপথ্যেঅবদান রয়েছে রক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ জি মাধবী লাথা ( Professor G Madhavi Latha)। মাধবীর (Madhavi Latha) ১৭ বছরের কঠিন পরিশ্রমের ফলই এই চেনাব সেতু।

এই প্রকল্পটি ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেলওয়ে সংযোগের (USBRL) অংশ যা ২০০৩ সালে অনুমোদিত হয়েছিল। সেতুটির সফল নির্মাণে অন্যতম প্রধান অবদানকারী হলেন অধ্যাপক জি মাধবী লাথা। জেনে নিন সেই মহিলা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞের পরিচয় যার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও তাঁর টিমের প্রয়াসেই নির্মাণ হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে দুর্গম পাহাড়ের বুকে চেনাব ব্রিজ।

কে এই জি মাধবী লাথা?

জি মাধবী লাথা বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc)-এর অধ্যাপক, তিনি ১৭ বছর ধরে চেনাব সেতু প্রকল্পে ভূ-প্রযুক্তিগত পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। কাটরা এবং কাজিগুন্ডের মধ্যে দুটি পাহাড়কে যুক্তকারী চেনাব রেল সেতুর পরিকাঠামোর পরিকল্পনা, নকশা এবং নির্মাণে, ভূখণ্ডের কারণে সৃষ্ট বাধাগুলির উপর গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। জীবনের প্রায় ১৭ বছর ধরে মেধা ও শ্রম দিয়েছেন কাশ্মীরের বুকে এই অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নির্দশনের জন্য। জি মাধবী লাথা বর্তমানে IISc-তে HAG অধ্যাপক। তিনি ১৯৯২ সালে জওহরলাল নেহেরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ওয়ারাঙ্গলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এম.টেকের ছাত্রী হিসেবে তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। তাঁর বিশেষত্ব ছিল জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ডঃ লাথা ২০০০ সালে আইআইটি-মাদ্রাজ থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। মাধবী তাঁর কাজের জন্য বেশ কয়েকটি পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০২১ সালে, ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল সোসাইটি তাঁকে সেরা মহিলা জিওটেকনিক্যাল গবেষক পুরষ্কার প্রদান করে। ২০২২ সালে তিনি ভারতের স্টিমের শীর্ষ ৭৫ জন মহিলার তালিকায়ও স্থান পান।

চেনাব সেতু প্রকল্পে ভূমিকা

চ্যালেঞ্জিং ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া এবং চেনাব সেতুর প্রত্যন্ত অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে নির্মাণ কাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল। ডঃ লাথার দল সমস্ত বাধা অতিক্রম করার জন্য “নিজেদের পছন্দের মতো নকশা” পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। এর অর্থ ছিল ভাঙা শিলা, লুকানো গহ্বর এবং বিভিন্ন ধরণের শিলা বৈশিষ্ট্যের মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বাস্তব সময়ে উদ্ভাবন করা, যা প্রাথমিক সমীক্ষায় স্পষ্ট ছিল না।

নির্মাণের সময় তারা যে প্রকৃত পাথরের ভরের অবস্থা খুঁজে পেয়েছিল তা নিয়ে কাজ করার জন্য দলটি জটিল গণনা এবং নকশা পরিবর্তন করেছে। তিনি সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল জার্নালের মহিলাদের বিশেষ সংখ্যায় “ডিজাইন অ্যাজ ইউ গো: দ্য কেস স্টাডি অফ চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ” শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। এই গবেষণাপত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে সেতুর নকশা কীভাবে ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে, সামগ্রিক কাঠামো, অবস্থান এবং ধরণই সাইটের ভূতাত্ত্বিক অবস্থার সাথে মানানসই একমাত্র ধ্রুবক। সেতু নিয়ে মাধবী বলেছেন, ‘সমস্ত ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে আমরা নকশায় বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছি। উদাহরণস্বরূপ, মূল প্রজেক্টে ভিতগুলো যেখানে থাকার কথা ছিল সেখান থেকে সামান্য সরানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ Vande Bharat Express : জানেন কি কেন ইউনিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে কাটরা-শ্রীনগরগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসকে?

প্রসঙ্গত, ১,৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত, চেনাব সেতুকে সরকার “সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতের যেকোনো রেল প্রকল্পের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বড় সিভিল-ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ” হিসাবে বর্ণনা করেছে। ৩৫৯ মিটার লম্বা এই সেতুটি আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার লম্বা। এই প্রকল্পটি কাশ্মীর উপত্যকায় যোগাযোগ উন্নত করবে। ২২০ কিমি বেগে বাতাসের ঝটকা ও ৮ মাত্রার ভূমিকম্পও সহ্য করতে পারবে এই সেতু। এই ব্রিজ তৈরির প্ল্যানিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে এবং ২০১৭ সাল থেকে মূল কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তারই নেপথ্যে ছিলেন রক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ জি মাধবী লাথা (Madhavi Latha)।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT