নিউজ পোল ব্যুরো: সল্টলেকের (Salt Lake) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ফের লক্ষাধিক টাকার প্রতারণা করার চেষ্টা। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার । সল্টলেকের একটি নামী পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি (National Pest Control Services) তাঁদের অফিসের এক কর্মীকে ব্যাংকে পাঠায়। নিয়মিত ওই ব্যাংকটিতে যাতায়াত করা হত বলতেই জানা গিয়েছে। সোমবার National Pest Control Services তাঁদের এক কর্মীকে ব্যাংকে পাঠায় একটি RTGS করার জন্য যার মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা। ওই কর্মী ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র থেকে এফসি ব্লক ব্রাঞ্চ থেকে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সেক্টর ৩ ব্রাঞ্চে যান। দীপক মল্লিক নামে ওই কোম্পানির কর্মী বেলা ১২.৩০ মিনিট নাগাদ ব্যাংকে গিয়ে ফর্মটি জমা দিয়ে অফিসে ফিরে আসেন। তার পরেই RTGS করতে দীর্ঘ সময় নেওয়ায় বারবার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তার পরেই ওই কর্মী বিষয়টি খোঁজ নিতে আবারও যান ব্যাংকে।
দীপক মল্লিক বেলা ৩.৩০ নাগাদ পুনরায় সল্টলেকের (Salt Lake) ব্যাংকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে চলে আসেন এবং তাঁকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় সার্ভার স্লো থাকার কারণে কিছু টা সময় লাগবে । সেই ঘটনার কিছুক্ষণ পর National Pest Control এর এক আধিকারী লক্ষ্য করেন তাঁর ফোনে একটি মেসেজে আসে ব্যাংকের তরফ থেকে। তখনই তিনি লক্ষ করেন বিকেল ৪.৩৭ নাগাদ ওনাদের পাঠানো RTGS যে একাউন্ট এ যাবার কথা তার পরিবর্তে অন্য একাউন্টে চলে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির পক্ষ থেকে যাওয়া হয় উক্ত ব্যাংকে। ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে চান। কিছুক্ষণ পর জানা যায় National Pest Control Services নামের কোম্পানির কর্মী RTGS ফর্ম জমা দেওয়ার ও দ্বিতীয়বার খোঁজখবর নিয়ে ফেরার পর এক যুবক এই ব্যাংকে আসে। বয়স আনুমানিক ৩০ এর ভেতর সেই যুবকটি ব্যাংকের কর্মীদের সঙ্গে কিছু কথাবার্তাও বলেন, সেই ছবি সিসিটিভি ফুটেছে ধরা পড়ে। তদন্তে নেমে জানা যায় ওই সেই ব্যক্তি খুব সাবলীল ভাবে ব্যাংকের এক কর্মচারীর কাছে গিয়ে বলেন কোম্পানির নাম নিয়ে RTGS ফর্মে কিছু ভুল আছে পরিবর্তন করতে হবে। এরপর তিনি সেই ফরমটি নিয়ে ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেন এবং নকল সই এবং স্ট্যাম্প ব্যবহার করে টাকাটি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিল।
বিষয়টি বুঝতে পেরেই ন্যাশনাল পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের শীর্ষ আধিকারিকরা বিধান নগর দক্ষিণ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এবং একটি FIR দায়ের করেন এবং ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে লিখিত চিঠি দেন। জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ থানার পুলিশ ব্যাংকে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন। বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ সূত্রে খবর ছেলেটির নাম মোহাম্মদ সোহেল আক্তার। বিকেল ৪.১৬ নাগাদ তিনি ব্যাংকে প্রবেশ করেন এবং ৪.২৬ নাগাদ ভেতর থেকে বেরিয়ে যান। পরবর্তীকালে দেখা যায় ছেলেটি কিছুক্ষণের ভেতরে ৫১ হাজার টাকা তুলে নেয়। এই ঘটনা ঘটার পর ব্যাংকে তরফ থেকে অভিযুক্ত যুবকের ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং যে টাকাটি ওর একাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে সেই টাকাটি ফেরত নেবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল প্রেস কন্ট্রোল সার্ভিসের অন্যতম কর্ণধার সুপ্রতী ঘোষ জানান, “আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্ম সূত্রে ব্যাংকের ভরসায় যে টাকা রাখি বা লেনদেন করি,এ রকম ঘটনা ঘটলে চিন্তার বিষয়। এই কাণ্ড কি করে এরকম একটি নামী ব্যাংকের ভেতরে হতে পারে।” অন্যদিকে ঘটনা নিয়ে বাংক অফ মহারাষ্ট্রের FC ব্লকের ব্যাংক ম্যানেজার সৌরভ ভট্টাচার্য জানান, “আমাদের ব্রাঞ্চে এই ধরনের ঘটনা এই প্রথমবার ঘটল। আমাদের নজরে আসতেই আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমাদের কাস্টমার যাতে টাকা ফেরত পান সেই চেষ্টা আমরা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা ওই ছেলেটির ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজজ করে দিয়েছি যাতে সে কোনরকম ট্রানজাকশন না করতে পারে। এর পাশাপাশি পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করছি।”
আরও পড়ুনঃ Donald Trump : শুধুই কি’ শান্তি’ না কি ট্রাম্পের উদ্দেশ্য “শান্তির নোবেল”?
পুলিশি সূত্রে খবর সল্টলেকে (Salt Lake) ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ব্যাংকে যায় ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। ফুটেজ দেখার পর দেখা যায় ওই ছেলেটি দুবার ব্যাংকের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যুবকটি বিকেল ৪.১৬ থেকে ৪.২৬ এর মধ্যে জালিয়াতির কাজ করে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশের অনুমান এই কোম্পানির সম্বন্ধে আগাম কিছু ইনফরমেশন ছিল ওই ছেলেটির কাছে এবং ছেলেটির সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই একটি প্রতারণার মামলা রুজু করেছে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ এবং পুলিশ আশাবাদী খুব শীঘ্রই অভিযুক্ত যুবককে আটক করতে পারবে এবং আটক করে এই ঘটনার পিছনে বড় কোনও চক্রান্ত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করবে।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT