দেবোপম সরকার, বিধাননগর: ছোটবেলায় আমরা অনেকেই ভাবি কখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠবো। কবে ঘাড় থেকে নামবে বইয়ের ব্যাগের বোঝা। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আসল বাস্তবকে। তখন ফিরে যেতে ইচ্ছে করে শৈশব জীবনে, ভালো লাগে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ফিরে পেতে। তবে দাঁত থাকতে যেমন আমরা দাঁতের মর্ম বুঝি না, ঠিক তেমনি শৈশব কেটে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনা বড়ই কঠিন।বর্তমানে বিভিন্ন কাজের সূত্রে ও কাজের দৌড়ে সবাই ব্যস্ত। তবে এই ব্যস্ততম জীবনের বেড়াজাল কাটিয়ে, নিজেদেরকে শৈশব জীবনে ফিরিয়ে আনতে সল্টলেকের অন্যতম প্রাচীন স্কুল শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশনের প্রাক্তনীরা নিজেদের যতটা সম্ভব একত্রিত করে একটি অ্যালোমনি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন। আর তাঁদেরই উদ্যোগে নিউটাউনে এনকেডিএ স্টেডিয়ামে আয়োজিত হল অ্যালুমনাস কাপ ২০২৪। এদিন এই ফুটবল ম্যাচের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ফুটবলার চন্দন দাস ও সুখেন সেনগুপ্ত। এই ফুটবল প্রতিযোগিতাতে শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন স্কুলের প্রাক্তনীরা ছাড়াও সল্টলেক ও কলকাতার নামি আরও ১১টি স্কুল- সল্টলেক স্কুল, ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল, বিবেকানন্দ মিশন স্কুল, অ্যালবেনাইট অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন, এইচএলপিএস, নব নালন্দা, সেন্ট জেমস স্কুল, বিধাননগর গভর্ণমেন্ট হাইস্কুল, বিডিএম ইন্টারন্যাশনাল, পাঠভবন, হরিয়ানা বিদ্যামন্দির অংশগ্রহণ করে।প্রাক্তনীরা ফুটবল টিম তৈরি করে এই খেলাতে অংশ নেন। এই খেলা ও অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি পার্থসারথি পাল জানান, ‘আমরা স্কুলে যখন পড়তাম তখন বিভিন্ন রকম খেলাধুলো কালচারাল অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করতাম। স্কুল থেকে পাস আউট হয়ে যাবার পর বেশ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আবার অনেকেই কর্মসূত্র রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরে চলে গেছে। আমাদের এই অ্যাসোসিয়েশনের ফাউন্ডার মেম্বার অজয় চক্রবর্তী যিনি ১৯৯৫ সালে পাশ করেছিলেন এই স্কুল থেকে। তিনি আরও বেশ কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে এই অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেন।’প্রধানত, ফুটবল খেলার পাশাপাশি প্রাক্তনীদের গল্প, আড্ডা করতে করতে দিনটি কাটান। অ্যাসোসিয়েশন গঠনের পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেও দিন কাটে। প্রবীণরা নবীনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পেছন থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি আরও জানান, ‘আগের থেকে সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যারা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরাও অনলাইনের মাধ্যমে এই খেলাটি চুটিয়ে উপভোগ করেন। এর পাশাপাশি এই অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বিভিন্ন ব্যান্ড অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও কারোর শারীরিক অসুস্থতা কোন প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকা, নন টিচিং স্টাফ, কিম্বা কোন প্রাক্তনীরা যেকোনো সমস্যায় পড়লে এই অ্যাসোসিয়েশনের তরফে যথাযথ সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই খেলা ও প্রতিযোগিতায় কে জিতল কে হারলো সেদিকে আমরা ভাবি না। কারণ আমরা মনে করি আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল, বছরে একটা দিন সবাই মিলে একত্রিত হয়ে বেশ কিছু মধুর সময় কাটানো ও স্কুলের জীবনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করা।’