নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে বাসস্থান, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ভুরিভুরি। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের পড়ুয়াদের ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। একই সঙ্গে দুর্নীতির ছবি স্পষ্ট গরীব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্পেও। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে যখন সারা বাংলা জুড়ে তোলপাড় চলছে তখনই খাস কলকাতায় ইডির ম্যারাথন তল্লাশিতে মিলল দুর্নীতির টাকার পাহাড়।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই শিরোনামে রয়েছে লটারি কিং সান্তিয়াগো মার্টিনের লটারি কেলেঙ্কারির অভিযোগ। এই ঘটনার তদন্ত নেমেই সম্প্রতি কলকাতা সহ দেশের মোট ছয় রাজ্যে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, মেঘালয় ও পঞ্জাবের মোট ২২টি জায়গায় হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার পাহাড় উদ্ধার করেছে ইডি। সূত্রের খবর, দেশজুড়ে এই ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়ে নগদ ১২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ছাড়াও দেশজুড়ে এই অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট সার্টিফিকেট। সোশাল মিডিয়ায় এই টাকার ছবি এরই মধ্যে পোস্ট করেছে ইডি।
এদিন এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি ওই ৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ফ্রিজ করে দিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এছাড়াও এদিন সান্তিয়াগো মার্টিনের ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু তথ্য বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
প্রসঙ্গত ১৪ নভেম্বর লেক মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তারপর টাকা গোনার মেশিনও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, ওই অভিযান থেকে নগদ তিন কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই তালিকাতেই দেখা যায় ২০১৯ সাল থেকে রাজনৈতিক দল গুলিকে সবথেকে বেশি অনুদান দিয়েছে এই ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড। যার মোট পরিমাণটা ছিল ১৩৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে তৃণমূলের পকেটে ঢুকেছিল প্রায় ৫৪০ কোটি টাকা। আর ডিএমকে পেয়েছিল ৫০৯ কোটি টাকা। তারপরেই লটারি কেলেঙ্কারির অভিযোগে লটারি কিং সান্তিয়াগো মার্টিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০১৯ সাল থেকে অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে সান্তিয়াগোর সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে এই তদন্ত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা যেমন একটা বড় প্রশ্ন পাশাপাশি এই তদন্তের প্রেক্ষিতে আর কাকে কাকে গ্রেফতার করে ইডি সেটাও এখন একটা বড় প্রশ্ন| তার কারণ,সম্প্রতি ইডি ফের যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আবারও অভিযান শুরু করেছে তাতে অনেকেই মনে করছেন যে হয়তো আবারও এই ইডির জালে উঠে আসবেন শাসক দলের অনেকেই। এখন দেখার বিষয় একটাই যে কবে আর কতদিনে ইডি এই তদন্ত শেষ করতে সক্ষম হয়।