নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্যদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর নিয়ে দ্বন্দ্ব দুই বিচারপতির! ৫জন আবেদনকারীর জামিন মঞ্জুর। অপরদিকে, ৫ জনের জামিন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় মামলা গেল প্রধান বিচারপতির কাছে।
বুধবার কৌশিক ঘোষ, আলী ইমাম, শাহীদ ইমাম, চন্দন মণ্ডল, সুব্রত সামন্তের জামিন মঞ্জুর কলকাতা হাই কোর্টের। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক সাহার জামিন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিল দুই বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ে’র মধ্যে। এদের জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন প্রধান বিচারপতি। প্রয়োজনে নতুন বেঞ্চ গঠন করে এদের জামিনের মামলাটির শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাই কোর্টের পুজো অবকাশকালীন বেঞ্চে ছুটির আগে জামিনের আবেদন করেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তি প্রসাদ সিনহা-সহ অন্যান্যরা। আজ শেষ হয়েছে শুনানি। তবে রায়দান বাকি রেখেছেন বিচারপতিরা।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। শুধু ইডি নয়, পরে সিবিআইও এই একই মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল। শুধু একা পার্থ নয়, এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ কাণ্ডে ধৃত আরও আট জনের জামিন মামলারও রায় ঘোষণা হবে একই সঙ্গে। তবে পার্থরা যদিও সিবিআই মামলায় জামিন পান হাই কোর্টে, তবুও এখনই জেলমুক্তি হবে না।
এর আগে জামিন চেয়ে একাধিকবার হাই কোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন পার্থ। হাই কোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আবেদন। এর আগে ইডির মামলায় জামিন চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্থ। সেই জামিনের বিরোধিতা করে ইডি। গত এপ্রিলের ওই শুনানি শেষে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পার্থের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। পরে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন চেয়ে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্থ-সহ ন’জন। প্রায় ছ’মাস ধরে ওই জামিন মামলাগুলির শুনানি চলে হাই কোর্টে।
২০২২ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তার আগে তাঁর নাকতলার বাড়িতে চলেছিল দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। একই সময়ে পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটেও হানা দিয়েছিল ইডি। তল্লাশিতে টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। পরে অর্পিতার আরও একটি ফ্ল্যাট থেকে বিপুল নগদ উদ্ধার হয়। মোট উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ছিল ৪৯ কোটি ৮০ লাখ। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন। ইডির পর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইও অভিযোগ আনে। দু’টি মামলাই এখনও বিচারাধীন।