এবার কী নাম বদল ফোর্ট উইলিয়ামের?

কলকাতা শহর

নিজস্ব প্রতিনিধি: মোদী সরকারের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের একাধিক পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থানের নাম পরিবর্তন। এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশীক যুগের স্মৃতি মুছে ফেলা এবং ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির পুনর্স্থাপন। এলাহাবাদের নাম পরিবর্তন করে ‘প্রয়াগরাজ’ রাখা, মুঘলসরাইয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায়’ করা। এবার সেই খাতায় নাম লেখাল কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম। উইলিয়াম-এর নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘বিজয় দুর্গ’। ফোর্ট উইলিয়াম কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের স্মারক হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৯৬ সালে হুগলি নদীর তীরে প্রথম ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণ শুরু করে। ১৭৫৬ সালে বাংলার শেষ নবাব কলকাতা আক্রমন করে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দখল করেন।

কিন্তু ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশরা রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে শক্তিশালীভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সিরাজউদ্দৌলা তার দুই বিশ্বস্ত সহযোগী—মীর মদন ও মোহনলালের সঙ্গে মিলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে সিরাজউদ্দৌলা ও ব্রিটিশদের মধ্যে বিখ্যাত পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে ব্রিটিশদের নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ, আর নবাবের পক্ষে ছিলেন মীর মদন, মোহনলাল ও আরও কিছু বিশ্বস্ত সেনাপতি। কিন্তু এই যুদ্ধে নবাবের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক ছিলেন তার সেনাপতি মীর জাফর। তিনি গোপনে ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং যুদ্ধের সময় তাঁর বাহিনী যুদ্ধ না করে নিষ্ক্রিয় থাকে। এর ফলে নবাবের সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধের একপর্যায়ে নবাবের অন্যতম প্রধান সেনাপতি মীর মদন যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন এবং মোহনলাল অনেক চেষ্টার পরেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। অবশেষে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং পলায়ন করেন। ব্রিটিশরা পুনরায় কলকাতা ও ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে। ফোর্ট উইলিয়াম এবং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালিত হত এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শক্তি ও প্রভাবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে ফোর্ট উইলিয়ামের ভূমিকা বিশেষ করে ১৮৫৭ সালের প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ফোর্ট উইলিয়ামকে প্রতিরোধের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময়ে এটি ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। পাশাপাশি ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর হল ফোর্ট উইলিয়াম। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি প্রধান অঞ্চল, যা পূর্বাঞ্চলীয় ভারত এবং প্রতিবেশী দেশগুলির নিরাপত্তা ও সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

যদিও নাম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি, তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর মাসেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ২ ডিসেম্বর এই বিষয়ে একটি নির্দেশনা আসার কথা জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক উইং কম্যান্ডার হিমাংশু তিওয়ারি। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সরকারি ঘোষণা না হলেও, প্রশাসনিক কার্যক্রমে ফোর্ট উইলিয়ামকে এখন ‘বিজয় দুর্গ’ হিসেবেই উল্লেখ করা হচ্ছে।” এছাড়া, ফোর্ট উইলিয়ামের সাউথ গেট এবং কিচেনার হাউসের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। সাউথ গেটের নাম রাখা হয়েছে ‘শিবাজী গেট’, যা আগে ‘সেন্ট জর্জ গেট’ নামে পরিচিত ছিল। আর কিচেনার হাউসের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানেকশ হাউস’।