নিউজ পোল ব্যুরো: বর্তমান যুগের ব্যস্ততার মাঝে যদি আপনি এমন এক অভিজ্ঞতার খোঁজে থাকেন, যা ইতিহাসের পাতায় পাতায় আপনাকে নিমজ্জিত করে। এমন এক অভিজ্ঞতা যা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের মাঝে আপনাকে নিয়ে যাবে, তাহলে ভাবুন এমন এক জায়গার কথা। এমন অভিজ্ঞতা পেতে আপনি বিনামূল্যে ঘুরতে পারবেন সুইজারল্যান্ড। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন ! ভারতের এক বিশেষ ট্রেনই আপনাকে এনে দেবে এক অনন্য, বিনামূল্যে ভ্রমণের সুযোগ, যেখানে প্রতিটি স্টেশনের ইতিহাসের মধুর স্মৃতি ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের ছাপ রয়েছে।

গত ৭৫ বছর ধরে পাঞ্জাবের নাঙাল থেকে হিমাচল প্রদেশের ভাকরা পর্যন্ত একটি বিশেষ ট্রেন প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা করছে। যদিও ভারতীয়রা এই ট্রেনের কথা জানেন, তবুও বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি – কারণ এই যাত্রাপথ শুধুমাত্র এক যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং ইতিহাসের এক অমূল্য অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারতের প্রাঙ্গনে শিল্পায়নের শুরুতেই ভাকরা – নিঙাল বাঁধ নির্মাণের প্রেক্ষাপটে, শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য এই বিশেষ ট্রেন চালু হয়। বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে যখন ট্রেক বন্ধ করার কথা উঠেছিল, তখন ভাকরা নাঙাল ম্যানেজমেন্ট বোর্ড এক ঐতিহাসিক মর্যাদার দাবিতে সিদ্ধান্ত নেয় যে – এই ট্রেন বন্ধ হবেনা, বরং বিনা পয়সায় চালানো হবে। তাঁরা নিজেই ট্রেন চালানোর সমস্ত খরচ বহন করছেন হাসিমুখে। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘এটা কেবল একটি যাত্রাপথ নয়, এটি ইতিহাসের এক জীবন্ত স্মারক।’ এই ট্রেনের কোচগুলো যা করাচিতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী কাঠের কাজের নিদর্শন, ব্রিটিশ আমলের ছাপ ও অবিভক্ত ভারতের স্মৃতিকে ধারণ করে। প্রতিটি কোচ যেন অতীতের সেসব বিজড়িত অধ্যায়ের সাক্ষী, আপনাকে নিয়ে যাবে ওই দিনের স্মৃতিতে, যেখানে দেশ নিজেকে গড়ে তুলেছিল এক নতুন ভবিষ্যতের পথে।

ট্রেনটি যখন শতদ্রু নদীর ওপর থাকা শিবালিক পর্বতমালার কোল দিয়ে এগিয়ে যায়, তখন প্রকৃতির এমন এক অপরূপ চিত্র আপনার চোখের সামনে উদয় হয়, যার তুলনা করা হয় প্রায়শই সুইজারল্যান্ডের মনোরম দৃশ্যের সঙ্গে। জুন ও জুলাই মাসে—প্রকৃতি যখন সজীবতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায় তখন এই রেলপথের সৌন্দর্য্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। অপরদিকে, অক্টোবর-নভেম্বরের কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে, শিবালিক পর্বতমালার মায়াময় চেহারা যেন এক মাদকতা এনে দেয়, যা আপনাকে এক অনন্য অনুভূতির বন্যায় নিমজ্জিত করে। যদি ইতিহাসের গভীরতা এবং প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্ন মাধুর্যের মধ্যে এক মিলনস্থল খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে এই বিনে পয়সায় ট্রেনের যাত্রা আপনার জন্য এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। প্রতিটি স্টেশনে, প্রতিটি কোচে আর প্রতিটি দৃশ্যে লুকিয়ে আছে এক অমূল্য ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের গল্প, যা আপনাকে অতীতের স্মৃতির সাথে বর্তমানকে জুড়ে দেবে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে।