নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: ভুয়ো পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে চান্দনাগারের এক ব্যক্তিকে নিউটাউনের বিলাসবহুল আবাসন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, যিনি চন্দননগরের বিন্দুবাসিনী পাড়ার বাসিন্দা। নিজেকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের অতিরিক্ত ডিজি (এডিজি) পরিচয়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, অভিযুক্তের ব্যবহৃত গাড়িটি ছিল একেবারে সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মতো। গাড়িতে ছিল নীল বাতি, তিনটি ষ্টার এবং গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া লেখা। পাশাপাশি গাড়িতে কোস্টগার্ডের লোগোও লাগানো ছিল, যা দেখে সহজেই অনেকে বিশ্বাস করতেন যে তিনি সত্যিই একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক। তবে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে তাঁর এই পরিচয় সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যেই তিনি এটি ব্যবহার করতেন।
গত মাসে চন্দননগরের এক প্রতারিত ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, যে তিনি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ তদন্তে নামে এবং জানতে পারে, অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে কোস্টগার্ডের এডিজি পরিচয় দিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। শুধু তাই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ওই গাড়ি এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে তাঁর ব্যাপক প্রভাব ছিল। তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্ত নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার জন্য সবসময় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে রাখতেন। কিন্তু পুলিশ জানতে পারে, এই নিরাপত্তারক্ষীরা কেউই সরকারি নয়, বরং তাঁরা প্রাইভেট সংস্থার কর্মী। তিনি তাঁর পরিচয়কে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্যই এই ব্যবস্থা করেছিলেন।
সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের প্রতারণার জাল শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিস্তৃত ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এলাকায় তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন এবং বড় আয়োজনে দুর্গাপুজো করতেন, যেখানে প্রচুর মানুষকে খাওয়ানো হত। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মনে করেই অনেকেই তাকে সমীহ করতেন। চন্দননগর পুলিশ অভিযুক্তকে আজ আদালতে পেশ করেছে এবং নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, ঠিক কতজনকে প্রতারণা করেছেন সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় এবং মোট কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তদন্তের মাধ্যমে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।