নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: হুগলির উত্তরপাড়া কোতরং ২ নম্বর বাজারে রবিবার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল। বাজারে মাছ-সব্জি কিনতে আসা এক যুবক জাল নোট দেওয়ার চেষ্টা করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সন্দেহ হয়। আসল নোটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেই ধরা পড়ে জাল নোটের কারসাজি। বাজারের ব্যবসায়ীরা এক যুবককে ধরে ফেলেন এবং উত্তরপাড়া থানার পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে তাঁকে আটক করে। তবে তাঁর সঙ্গী একজন পালিয়ে যায়।
বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়, রবিবারের সকালে বাজারে যথেষ্ট ভিড় ছিল। ঠিক সেই সময় দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবক বিভিন্ন দোকানে গিয়ে মাছ ও সব্জি কেনার নামে পাঁচশ টাকার নোট ধরাতে শুরু করে। তাঁদের কেনাকাটার ধরন বেশ অস্বাভাবিক ছিল—তাঁরা অল্প দামের জিনিস কিনেও বড়ো নোট দিচ্ছিল। এই ঘটনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এক মাছ বিক্রেতার সন্দেহ হয়, কারণ সাধারণত এই বাজারে পঞ্চাশ বা একশো টাকার নোটেই কেনাবেচা হয়। পাঁচশ টাকার নোট হাতে পেয়েই তিনি বুঝতে পারেন, কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আসল পাঁচশ টাকার নোটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন এবং নিশ্চিত হন, এটি নকল নোট। এরপরই তিনি আশেপাশের ব্যবসায়ীদের ডেকে বিষয়টি জানান। অন্যদিকে, এক যুবক টের পেয়ে দ্রুত সরে পড়ে, কিন্তু অপরজনকে ধরে ফেলেন বাজারের লোকজন। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ পুলিশ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপ দাসকে খবর দেন। সন্দীপ দাস জানান, ‘বাজারের সাধারণ মানুষই এই যুবককে ধরে ফেলে। তাঁরা আমাকে খবর দেয়, আমি পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করেছে।’
পুলিশ সূত্রে খবর, আটক যুবক নিজেকে কেষ্টপুরের বাসিন্দা বলে দাবি করেছে। তবে তাঁর কাছ থেকে বেশ কয়েকটি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ‘আমরা সাতটি জাল নোট ধরেছি, তবে তাঁর কাছে আরও জাল নোট থাকতে পারে। পুরো ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।’ বাজারের ব্যবসায়ীদের মতে, এই ধরনের প্রতারণা নতুন নয়, তবে এত স্পষ্টভাবে ধরা পড়া বিরল। জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতারকরা সাধারণত ব্যস্ত বাজার বেছে নেয়, যেখানে ভিড়ের সুযোগে সহজেই টাকা লেনদেন করা যায়। কিন্তু এবারের মতো সাধারণ মানুষের সচেতনতায় একজন ধরা পড়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে।
উত্তরপাড়া থানার পুলিশ এরমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। জাল নোট কোথা থেকে এল, এর পেছনে কোনও বড় চক্র কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, ধৃত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চক্রের অন্য সদস্যদের নাম জানা যেতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, বাজারে আরও নজরদারি বাড়ানো হোক, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণা রোখা যায়। পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে এবং সন্দেহজনক লেনদেন দেখলেই থানায় খবর দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাজারে কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা তৈরি হলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ধৃত যুবকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং পুলিশ ইতিমধ্যেই পলাতক যুবকের খোঁজ চালাচ্ছে।