নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: বিধাননগর এলাকায় বে-আইনি হোর্ডিং নিয়ে কড়া হাই কোর্ট। বে-আইনি হোর্ডিং নিয়ে পুরসভা কেন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সেটা স্পষ্ট নয় আদালতের কাছে।
এতো বে-আইনি হোর্ডিং দেখেও কিছু করেনি পুরসভা, মনে হয় ইচ্ছে করেই ব্যবস্থা নেয়নি, বৃহস্পতিবার এমনই মন্তব্য করেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব বে-আইনি হোর্ডিং খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। রিপোর্ট দিতে হবে আগামী ২০ ডিসেম্বর। বে-আইনি হোর্ডিং শনাক্তকরণ করে মুক্ত করার আর্জি চেয়ে মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টে| মামলাটি করেন দিব্যায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্য রিপোর্ট দিয়ে জানায়, ওই এলাকায় ৩৫১ টি বে-আইনি হোর্ডিং আছে। প্রধান বিচারপতির বসেন, ৩৫১ টি বে-আইনি হলে কেন খুলে ফেলছেন না? নোটিশ দিন। ওদের নিজেদেরই খুলতে বলুন। এর উত্তরে রাজ্যের তরফে আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান এজেন্সিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদপত্রে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এর পরে না খোলা হলে গ্রেফতার করুন। এরপরই রাজ্যের আইনজীবী বলেন, আমাদের কিছুটা সময় দেওয়া হোক।
প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, আপনারা নিজেরাই স্বীকার করছেন তাও কাজ না করলে মনে হয় ইচ্ছে করেই করছেন। হয় ওই এজেন্সিগুলি খুলুক। না হয় পুরসভা হোর্ডিং মুক্ত করুক। তাই এখন দেখার বিধাননগর পুরসভা এলাকায় কত তাড়াতাড়ি এই বেআইনি হোর্ডিং খোলা হয়।
অন্যদিকে, এদিন আউটডোর অ্যাডভার্টাইসিং গভর্নিংবডির মেম্বার সুজয় সাহা জানান, ‘কয়েকমাস আগে আচমকাই বিধাননগরে হোর্ডিং খুলতে দেখা গিয়েছিল করুণাময়ী এবং সিটি সেন্টারে। তারপরে অ্যসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল বৈঠক করে মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রদের সঙ্গে। সেখানেই ঠিক হয় স্বচ্ছতার সঙ্গে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে এবং যারাই এই টেন্ডার পাবেন তাঁরাই হোর্ডিয়ের কাজ করবেন। আমরাও চাই বেআইনি হোর্ডিং খুলে ফেলে দৃষ্যদূষণ কমাতে। সঠিকভাবে হোর্ডিং লাগানো থেকে শুরু করে কলকাতা হাই কোর্টের যে রায় তাতে বলা হয়েছে যে ৩৫১ টি বে-আইনিভাবে হোর্ডিং আছে সেগুলিকে অবিলম্বে খুলে ফেলা হোক তাতে সংগঠন কোনও বাধা দেবে না। এরই মধ্য়ে টেন্ডার প্রকাশ করেছে বিধাননগর পুরসভা। এখন দেখার কত তাড়াতাড়ি হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিধাননগর পুরসভায় সঠিকভাবে হোর্ডিং লাগানোর কাজ শুরু হয়।
পাশাপাশি বিধাননগর পৌরনিগমের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, অতীতে আমরা হোডিংয়ের কোনও অনুমতি দিইনি। সারা বিধাননগর জুড়ে বেআইনি হোর্ডিং হয়েছে। আমরা নতুন করে বিভিন্ন জোন ওয়াইজ টেন্ডার করছি। কলকাতা হাই কোর্ট আমাদের নির্দেশ দিয়েছে সাতটি ইউনিপোল বাদ দিয়ে সবকটি হোডিংয়ের জন্য টেন্ডার করতে। আমরা সেই টেন্ডারটি করে দিয়েছি। বর্তমানে বিধাননগর জুড়ে এতো হোডিং আছে সেই হোডিং খুলতে গেলে আমাদের পৌর নিগমের কাছে এতো লোকবল নেই এবং এতো অর্থও নেই। নতুন করে যারা টেন্ডার পাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাঁরা পুরনো হোর্ডিং সব খুলে ফেলবে। কলকাতা হাই কোর্ট এবং বিধাননগর পৌরনিগম বলার পরেও যদি নতুন করে যারা টেন্ডার পাবেন তাঁরা পুরনো হোডিং না খোলে তাহলে সেই সব কোম্পানির ওপর দায় দায়িত্ব বর্তাবে ভবিষ্যতের। আমরা নিজেরাও জানি না বিধাননগর জুড়ে এতো হোর্ডিং কোথা থেকে এলো, সেই হোডিংগুলো কাদের। তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার সময় যে হোর্ডিং ছিল বাম আমলের এখন কিছু বেশি। এগুলো যদি আমরা বাদ দিই বাদবাকি সব হোর্ডিংই বেআইনি। পুজোর আগে পৌরনিগমের তরফ থেকে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং খুলে দেওয়া হয়েছিল, তারপরে আবারও নতুন করে সব হোর্ডিং লেগে যায়। বিধাননগরের দৃশ্য দূষণের কথা মাথায় রেখে কোন এলাকায় কতগুলো হোডিং লাগতে পারে সেই নিয়ে এরই মধ্যে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছে বিধাননগর পৌরনিগম। স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিয়ম মেনে এই হোর্ডিং কোম্পানিগুলিতে হোর্ডিং বন্টন হবে যারা টেন্ডার পাবেন।
অন্যদিকে কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, এর আগে তাঁর সঙ্গে কোনরকম হোর্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক হয়নি। কৃষ্ণা চক্রবর্তী স্বীকার করেন এই হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে বিধাননগর পৌরনিগমের কিছু আয় বাড়বে, যার ফলে আরও ভালো নাগরিক পরিষেবা দিতে পারবে পৌরনিগম। কৃষ্ণা চক্রবর্তী স্বীকার করে নেন বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে বিধাননগরের দৃশ্য নন্দন না হয়ে দৃশ্য দূষণ হচ্ছে। বিধাননগর একটি পরিকল্পিত নগরী সেখানে আইন মেনে যতগুলি হোর্ডিং লাগানোর কথা ভবিষ্যতে তাই করা হবে। কৃষ্ণা চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘অতীতে আমি কোনও বেআইনী কাজের সঙ্গে ছিলাম না ভবিষ্যতেও থাকবো না। আমি যেটুকুই কাজ করব স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করব।