নিউজ পোল ব্যুরো : ভারত এমন এক দেশ, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রেমের কাহিনি একসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। যুগে যুগে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালোবাসার স্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু ঐতিহাসিক স্থান (Historical place)। এই স্থানগুলো শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করে না, বরং প্রেমের এক চিরন্তন বার্তাও বহন করে। আপনি যদি ইতিহাস ও প্রেমের মিশেল অনুভব করতে চান, তাহলে এই ৩টি দর্শনীয় স্থান আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন জায়গায় গেলে কোন প্রেমের গল্পের ছোঁয়া পাবেন।
১. তাজমহল (আগ্রা, উত্তরপ্রদেশ) – ভালোবাসার চিরন্তন নিদর্শন
বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় তাজমহল মানেই প্রেমের প্রতীক। এটি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজ মহলের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। মুমতাজ মহলের অকালমৃত্যুর পর শাহজাহান তাঁর স্মৃতিতে এই অপূর্ব সৌধ নির্মাণ করেন, যা আজও প্রেমের সবচেয়ে মহৎ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। তাজমহল নির্মাণ শুরু হয় ১৬৩২ সালে এবং এটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। সাদা মার্বেলের তৈরি এই অসাধারণ স্থাপত্যে মুঘল, পার্সিয়ান ও তুর্কি শিল্পকলার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়।
কেন যাবেন?
প্রেমের চিরন্তন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় তাজমহলের অপরূপ রূপ দেখতে।
ইতিহাসের পাতায় লেখা শাহজাহান-মুমতাজের ভালোবাসার গল্প অনুভব করতে।
কিভাবে যাবেন?
আগ্রায় পৌঁছানোর জন্য দিল্লি থেকে ট্রেন বা গাড়িতে সহজেই যাওয়া যায়। আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাজমহল খুব কাছেই।
২. মেহরানগড় দুর্গ (জোধপুর, রাজস্থান) – রাজকীয় প্রেমের সাক্ষী
রাজস্থান তার ইতিহাস ও রূপকথার জন্য বিখ্যাত, আর তার অন্যতম আকর্ষণ মেহরানগড় দুর্গ। ১৪৫৯ সালে রাও যোধা এটি নির্মাণ করেন। এই দুর্গের সাথে জড়িয়ে আছে এক করুণ প্রেমের কাহিনি—রাজা এবং এক সাধারণ নারীর অসম প্রেম। এই দুর্গ থেকে একসময় রাজপরিবারের রাজকন্যাদের প্রেমের গল্প রচিত হতো। এখানে এখনো রয়েছে ঝরোখা, যেখান থেকে রাজকন্যারা বাইরে তাকিয়ে দেখতেন তাঁদের প্রেমিকদের।
কেন যাবেন?
রাজস্থানের গৌরবময় ইতিহাস ও প্রেমের গল্প জানতে।
দুর্গের ভেতরে অবস্থিত রানি সুরজন কোট দেখার জন্য, যেখানে রাজপরিবারের নারীরা থাকতেন।
জোধপুর শহরের নীল রঙের ঘরবাড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
কিভাবে যাবেন?
জোধপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মেহরানগড় দুর্গ মাত্র ৬ কিমি দূরে অবস্থিত। আপনি ট্যাক্সি বা অটো নিয়ে সহজেই সেখানে পৌঁছাতে পারবেন।
৩. শিলং ভিউ পয়েন্ট (মেঘালয়) – রোমান্সের স্বর্গরাজ্য
যারা প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে প্রেম খুঁজে পান, তাঁদের জন্য আদর্শ স্থান হলো মেঘালয়ের শিলং ভিউ পয়েন্ট। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে নিজেদের প্রেমকে আরও গভীর করতে পারেন। শিলং ভিউ পয়েন্টের সঙ্গে একটি রোমান্টিক কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে। কথিত আছে, একসময় এখানে এক তরুণ-তরুণী নিয়মিত দেখা করতেন, কিন্তু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁদের প্রেম পরিণতি পায়নি। এরপর থেকে এই স্থান প্রেমিকদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য হয়ে ওঠে।
কেন যাবেন?
সবুজ পাহাড়, মেঘ ও অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে।
মেঘালয়ের স্থানীয় উপজাতির সংস্কৃতি ও প্রেমের গল্প জানতে।
শীতল আবহাওয়ায় রোমান্টিক পরিবেশ অনুভব করতে।
কিভাবে যাবেন?
শিলং বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে সহজেই শিলং ভিউ পয়েন্টে যাওয়া যায়। গুয়াহাটি থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে করেও শিলং পৌঁছানো সম্ভব।
প্রেম শুধু অনুভূতি নয়, এটি ইতিহাসের পাতায়ও অমর হয়ে থাকে। তাজমহলের মতো প্রেমের নিদর্শন, মেহরানগড় দুর্গের রাজকীয় প্রেমকাহিনি কিংবা শিলং ভিউ পয়েন্টের রোমান্টিক পরিবেশ—এই স্থানগুলো প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
আপনি যদি ভালোবাসার কোন নিদর্শন দেখতে চান, তাহলে অবশ্যই এই জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন। এগুলো শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং প্রেমের এক চিরন্তন গল্পের সাক্ষী।