নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৫৮ বছরের নিঃসন্তান দম্পতিকে টেস্ট টিউব বেবি নেওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই নির্দেশের ফলে বহু সন্তানহীন দম্পতির সামনে নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা কলকাতার কাশীপুরের ওই দম্পতির আবেদনে অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর যেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে।
৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে হয়নি সন্তান। বাধ্য হয়ে পরিকল্পনা করেছেন টেস্ট টিউব বেবি নেওয়ার। কিন্তু সেখানেও বাদ সাধছে বয়স। প্রয়োজন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের থেকেও অনুমতি না পেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কলকাতার এক দম্পতি। বিচারপতি অমৃতা সিনহা গত ১৯ তারিখ এই মামলার শুনানির শেষে কোন নির্দেশ দেননি। পরিবর্তে আজ শুক্রবার মামলাটির শুনানির জন্য রেখেছিলেন। সেই মতো এদিন তিনি এই নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, টেস্ট টিউব বেবি বা আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নিতে চান বলে বলে পিএইচএস ফার্টিলিটি ক্নিনিকে আবেদন জানিয়েছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু তাঁদের জানানো হয় নিয়ম অনুয়ায়ী স্বামীর বয়স যা থাকা প্রয়োজন তার থেকে বেশি হয়ে গেছে। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানান, তাঁরা যাতে তাঁদের বংশরক্ষা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনও তাঁদের আবেদনে অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়েই তাঁরা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
হাই কোর্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, কলকাতার কাশীপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতির বিবাহ হয় ১৯৯৪ সালে। কিন্তু ৩০ বছরে তাঁদের কোন সন্তান হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পিএইচ ফার্টিলিটি ক্লিনিকে আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু গত ২৭ জুন দম্পতিকে জানানো হয় নিয়ম অনুয়ায়ী স্বামীর বয়স যা থাকা প্রয়োজন তার তুলনায় বেশি। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি লাগবে। নিয়ম অনুযায়ী এই পদ্ধতিতে সন্তান নিতে গেলে পুরুষের বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৫৫ বছর। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স হবে ৫০ বছর কিন্তু কাশীপুরের দম্পতির ক্ষেত্রে স্বামীর বয়স ৫৮। তাই স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি মেলেনি।
এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সিনহা দম্পতির উদ্দেশে জানতে চান, ‘এই বয়সে এসে সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবেন তো? একটি সন্তানকে মানুষ করার জন্য পরিকল্পনা কি রয়েছে?’ ওই দম্পতির আইনজীবী অচিন জানা জানান, তাঁর মক্কেল আর্থিক ভাবে সমর্থ। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে যা যথেষ্ট। এ ব্যাপারে তাঁরা মানসিক ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, পুরুষের বয়স বেশি হলেও এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।
রাজ্যের তরফে আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মৌলিক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুয়ায়ী বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। একটা বাচ্চা জন্মের পর তার ভালোবাসা, যত্নের ভীষণ প্রয়োজন। একই সঙ্গে পরিবারের আর্থিক স্থিরতা না থাকলে বাচ্চাটি অবহেলিত হতে পারে।’
তারপরই বিচারপতি মামলাকারীর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘মহিলা কি করেন? আইনজীবী জানান তিনি গৃহবধূ। বিচারপতি তারপরই জানতে চান, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে তো পরিবারের? আইনজীবী জানান, আর্থিক ভাবে কোন সমস্যা হবে না পরিবারের। স্বামী যিনি তাঁর ব্যবসা রয়েছে। ফলে অসুবিধা হবে না।