নিউজ পোল ব্যুরো: সত্যজিত রায়ের ‘সেপ্টোপাসের খিদে’র মাংসাশী উদ্ভিদ বা শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’-এর বার্নাম বনের গাছ—এসব গল্পেই মানায়, তাই না? কিন্তু বাস্তবেই যদি এমন গাছ থাকে, যা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যায়? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, ইকুয়েডরের (Ecuador) গহীন রেন ফরেস্টে এমন গাছের অস্তিত্ব রয়েছে! এই গাছগুলো সত্যিকারের ‘চলন্ত বৃক্ষ’ (Walking Trees), যা ধীরগতিতে হলেও আস্তে আস্তে নিজের স্থান বদল করতে পারে! এই রহস্যময় গাছের নাম ‘ক্যাশাপোনা’ (Socratea exorrhiza)—এটি একধরনের পাম গাছ (Palm Tree)। তবে সাধারণ পামদের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জীবন কাটিয়ে দেয় না, বরং প্রয়োজনে নিজের জায়গা পরিবর্তন করে! ভাবুন তো, গাছ নিজের ইচ্ছেমতো হাঁটছে—এ তো যেন একেবারে কল্পবিজ্ঞান! তবে গাছগুলো ঠিক পা ফেলে হাঁটে না, তারা চলে ‘স্টিল্ট রুট’ (Stilt Roots) নামে এক অদ্ভুত কৌশলে। মাটির ওপরে উঁচু উঁচু শিকড় বেরিয়ে আসে, যা একদিকে শক্ত মাটির খোঁজে এগিয়ে যায়, আর অন্যদিকে পুরোনো শিকড় মাটি ছেড়ে সরে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে গাছটা নিজের পুরোনো জায়গা থেকে সরে পড়ে! ইকুয়েডরের গভীর জঙ্গলে যেখানে এই গাছেরা থাকে, সেখানে মাটির ক্ষয়ের হার (Soil Erosion) খুব বেশি। এছাড়া, সূর্যের আলোও ঠিকমতো সব জায়গায় পৌঁছায় না। ফলে, মাটির ক্ষয় শুরু হলে বা পর্যাপ্ত আলো না পেলে, ক্যাশাপোনা গাছ ‘চলতে শুরু করে’!
আরও পড়ুন:- Golden Passport Sale: নাগরিকত্ব কিনলেই ৮৯ দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ!

একটা নতুন শক্তিশালী শিকড় বেরিয়ে মাটিতে গেঁথে যায়, আর পুরোনো শিকড়গুলো(Walking Tress) ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এতে করে গাছটা একটু একটু করে সরে গিয়ে বেশি আলো আর শক্ত মাটি খুঁজে নেয়। দিনে প্রায় ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত এই গাছ সরে যেতে পারে! তবে পুরোপুরি জায়গা বদল করতে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়! কেউ কেউ এমনও দেখেছেন যে, একটি ক্যাশাপোনা গাছ ২০ মিটার পর্যন্ত সরে গেছে!এই অদ্ভুত গাছের খোঁজ পেয়েছেন একদল বিজ্ঞানী, যাঁদের মধ্যে আছেন ব্রাতিস্লাভার স্লোভাক অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (Slovak Academy of Sciences)-এর ভূবিজ্ঞানী পিটার ভ্র্যানস্কি (Peter Vransky)। তিনি এবং স্থানীয় গাইড থিয়েরি গার্সিয়া (Thierry Garcia) একসঙ্গে এই গাছ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তবে এই গাছ দেখতে হলে ভ্রমণটা বেশ কঠিন! প্রথমে ইকুয়েডরের রাজধানী কিটো (Quito) থেকে তিন ঘণ্টার গাড়ি যাত্রা, তারপর নৌকা, খচ্চরের পিঠে চড়া, কাদা-পানি পেরিয়ে হাঁটতে হবে আরও ৭-১৫ ঘণ্টা! শুনতে কষ্টকর লাগলেও, একবার সেখানে পৌঁছাতে পারলে পরিশ্রমটা একেবারে সার্থক!
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:- https://www.facebook.com/share/164mWXbsyp/
একটা মজার ব্যাপার হল—এই গাছগুলো(Walking Trees) শুধু মাটি আর আলোর খোঁজেই হাঁটে না, প্রতিবেশী গাছের সমস্যাও এড়িয়ে যায়! যদি পাশের কোনও গাছ ঢলে পড়ে, তাহলে ক্যাশাপোনা গাছও আস্তে আস্তে জায়গা পাল্টে নেয়, যেন কেউ যেন ওর ব্যক্তিগত জায়গায় (Personal Space) হস্তক্ষেপ না করে! একেবারে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন গাছ! এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি কি সত্যিই হাঁটে, নাকি কেবল শিকড়ের বৃদ্ধির ফলে স্থান পরিবর্তন হয়? বিজ্ঞানীরা একে ‘Walking Tree’ বললেও, এটি আসলে খুবই ধীরে চলে। তবে গাছের জগতে এটাই তো সবচেয়ে ‘নড়াচড়া’ করা’ উদাহরণ! তাহলে বলুন, সত্যজিৎ রায়ের কল্পনা, না শেক্সপিয়ারের বন—কে জিতল? বাস্তবেই যে এমন আশ্চর্য গাছ আছে, সেটা তো কেউই ভাবতে পারেনি! এখন থেকে জঙ্গলে হাঁটতে গেলে সাবধান—পাশের গাছটা কিন্তু জায়গা পাল্টে ফেলতে পারে!