নিউজ পোল ব্যুরো: রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে গর্জন ওঠে গভীর জঙ্গলে। দূরে কোথাও শোনা যায় গন্ডারের ভারী পদচারণা। আর সেই ঘন অন্ধকারের মধ্যে, বন্দুক কাঁধে সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে টহল দিচ্ছেন একদল নারী— এসএলআর রাইফেলের (SLR Rifle) ট্রিগারে তাঁদের আঙুল, চোখে দৃঢ় সংকল্প। তাঁরা ‘বনদুর্গা’ (Kaziranga Ban Durga), কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের (Kaziranga National Park) এক অদম্য বাহিনী, যাঁরা চোরা শিকারিদের (Poachers) বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান (Kaziranga National Park) শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের কাছে এক ঐতিহ্যবাহী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র (Wildlife Conservation Hub)। একশৃঙ্গী গন্ডারের (One-horned Rhinoceros) জন্য খ্যাত এই জঙ্গল চোরা শিকারি (Poachers) আর বন্যপ্রাণীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা লড়াই চালিয়ে যায়। কিন্তু এবার এখানে শুধু পশুদের রক্ষা করাই নয়, বরং বনরক্ষকদের (Forest Guards) মধ্যে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এক বাঙালি নারী— সোনালী ঘোষ (Sonali Ghosh)। সোনালী ঘোষ হলেন কাজিরাঙার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ফিল্ড ডিরেক্টর (First Female Field Director of Kaziranga)। তাঁর নেতৃত্বে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যেখানে বনরক্ষা আর টহলদারির কাজে পুরুষদের পাশাপাশি একদল রাইফেলধারী নারীও যোগ দিয়েছেন— যাঁদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) ভালোবেসে নাম দিয়েছেন ‘বনদুর্গা’ (Ban Durga)।
আরও পড়ুন:- Shalik: শালিক শুভ না অশুভ? জানুন বিস্তারিত

সেনাকর্তা বাবার মেয়ে সোনালী ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি ও বনজীবনের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সায়েন্সে (Forestry and Wildlife Science) এমএসসি এবং পরিবেশ আইন ও সিস্টেম ম্যানেজমেন্টে (Environmental Law and Systems Management) স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন। এমনকি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির (Remote Sensing Technology) মাধ্যমে ভারত-ভুটান সীমান্তে বাঘ সংরক্ষণে (Tiger Conservation) গবেষণাও করেছেন। কাজিরাঙার ২৩৩টি চোরাশিকার বিরোধী শিবির (Anti-Poaching Camps) একসময় শুধুই পুরুষদের জন্য তৈরি ছিল। কিন্তু সোনালীর প্রচেষ্টায় সেখানে মহিলাদের জন্য নতুন শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। শৌচাগার, রান্নার জায়গা তৈরি করে মহিলাদের(Kaziranga Ban durga) জন্য পরিবেশ উপযোগী করা হয়। প্রথমে সংশয় ছিল, নারীরা কি পারবে? কিন্তু বন্দনা দাস, প্রিয়াঙ্কা বরা, বিপাশা নাথদের মতো নারী বনরক্ষীরা প্রমাণ করেছেন, তাঁরা পুরুষদের মতোই দক্ষ। শুধু বনরক্ষা নয়, সোনালী কাজিরাঙায় নতুন পর্যটন উদ্যোগ (Eco-tourism Initiatives) চালু করেছেন। সাফারির (Safari) পাশাপাশি জঙ্গল ট্রেকিং (Jungle Trekking), বার্ড ওয়াচিং (Bird Watching), সাইক্লিং ট্যুর (Cycling Tour) এবং নদী পর্যটনের (River Tourism) ব্যবস্থা করেছেন। স্থানীয় কার্বি ও মিসিং সম্প্রদায়ের (Karbi and Mishing Communities) মানুষদেরও এই উদ্যোগের অংশীদার করেছেন।
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:- https://www.facebook.com/share/164mWXbsyp/

সোনালী আইএএস চন্দ্রভূষণ(IAS Chandrabhusan) কুমারের স্ত্রী এবং ১৩ বছরের এক কন্যার মা। কিন্তু কর্মস্থলে দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে পরিবার থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকতে হয় তাঁকে। তাঁর মতে, যদি মহিলাদের জন্য কাজের জায়গায় উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা, ভালো স্কুল, ক্রেশ (Creche Facilities) থাকে, তবে নারীরা পুরুষদের থেকেও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।জঙ্গলে নারীরা বন্দুক হাতে দায়িত্ব পালন করছেন, রাতে টহল দিচ্ছেন(Kaziranga Ban Durga), প্রাণী উদ্ধার করছেন। কেউ আঙুলে নেলপালিশ লাগালেও ট্রিগার টিপতে এক মুহূর্ত দেরি করেন না! সাধারণ চোখে তাঁদের উচ্ছল তরুণী মনে হলেও, প্রয়োজনে তাঁরা চণ্ডীর মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। সোনালীর নেতৃত্বে এই বনদুর্গারা শুধু কাজিরাঙাকে রক্ষা করছেন না, বরং নারীর ক্ষমতায়নের (Women Empowerment) এক নতুন অধ্যায় রচনা করছেন।