নিউজ পোল ব্যুরো: কিছু সকাল শুরু হয় রাতের রেশ নিয়ে। কিছু সকাল শুরু হয় ঘোরের মধ্যে দিয়ে। যেন মনে হয় গত রাতের দেখা স্বপ্ন এখনও শেষ হয়নি। স্বপ্ন না সত্যি? সত্যিই তো। ভীষণভাবে সত্যি। স্বপ্নের মতো সত্যি। স্বপ্ন হলেও সত্যি। ১২ বছর পর। আফটার টুয়েলভ লং ইয়ার্স ১১ জন ভারতীয় যোদ্ধা (Team India) একদিনের ক্রিকেটে (ODI) বিশ্ব জয় করেছে রবিবার। ৯ মাসের মাথায় দ্বিতীয় আইসিসি ট্রফি (Champions Trophy) জয়। শুধু জয়? দাপটের সঙ্গে জয়। ২০২৩ সালের একদিনের বিশ্বকাপ (CWC 2023) থেকে মাঝে ২০২৪ সালের বিশ ওভারের বিশ্বকাপ (T20WC 2024) হয়ে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy 2025)— ২৪টি ম্যাচের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী টিম ইন্ডিয়া (Indian Cricket Team)। একটু বলা ভুল হল। রোহিতের (Rohit Sharma) টিম ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন: Champions Trophy : বিশ্বকাপ না পেলেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত!
তা যে স্বপ্নের কথা বলছিলাম। যে স্বপ্ন স্মৃতিমেদুর করে দেয় বছর ৩৭ -এর এক মুম্বাইকরকে (Rohit Sharma)। যিনি বিশ্বজয়ের স্বাদ তো পেয়েছেন আগেই কিন্তু ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বরের রাত এখনও যে তাঁকে বিদ্ধ করে। ক্ষতবিক্ষত করে। দুবছর আগে আহমেদাবাদ থেকে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কথায় বলে সমুদ্র নাকি কিছু নেয়না, সব ফিরিয়ে দেয়। আমাদের জীবনটাও ঠিক সেরকম। যা কিছু নেয়, সব ফিরিয়ে দেয়। ঠিক সেরকম একবছর মাথায় গতবছর জীবন তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল অধিনায়ক জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহারটি। বহু প্রতীক্ষার পর বার্বাডোজে এসেছিল কাঙ্ক্ষিত সেই আইসিসি ট্রফি। যার প্রতীক্ষায় কেটেছিল কতশত প্রহর।

তিনি রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। যাঁকে সাধারণ মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিভূ বললে ভুল হবেনা। ঘরে বাইরে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে প্রতিটা চাকরির পরীক্ষায় প্রিলি, মেইন্স পাশ করে ইন্টারভিউতে আটকে যেতে যেতে বেকার ছেলেটার যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ঠিক সেরকমই তাঁর জীবনও। ২০২৩ সালের সেই নভেম্বরের রাতে হাত দিয়ে আড়াল করেছিলেন চোখের জল। নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে ফাইনাল প্যানেল লিস্টে নাম না দেখতে পেয়ে ছেলেটা যেমন ভেঙে পড়লেও আবার শুরু করে প্রিপারেশন ঠিক সেরকম রোহিতও বলেছিলেন যে আবার বিশ্বকাপ জয়ের চেষ্টা করবেন। কিন্তু জীবন বড়ই কঠিন। কঠোর ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়া অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছিল তাঁর। যার প্রভাব পড়েছিল ব্যাটেও। এসেছিল রানের ক্ষরা। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ভয়। রোহিত বিশ্বকাপে পারবেন তো? তা রোহিত পেরেছিলেন। টিমের হয়ে সর্বাধিক রান (২৫৭ রান, স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৭০) করে কাপ জিতেছিলেন।

এবারেও বর্ডার গাভাস্কার সিরিজে ব্যর্থ হতেই রে রে করে ধেয়ে আসতে থাকে সমালোচনার বাণ। কিন্তু অবসরের জল্পনা থেকে রানের খরা সব জবাব ফিরিয়ে দিলেন হিটম্যান (Rohit Sharma)। আর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা আইসিসি টুর্নামেন্ট ফাইনালের থেকে ভাল মঞ্চ আর কিছু হতে পারতো কি? ২০২৩ সালে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকেই ব্যাটিংয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল দলকে একটা দ্রুত এবং মজবুত স্টার্ট দেওয়ার। যাতে পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা চাপে না পড়েন। আর রোহিত সেই কাজই করে আসছেন সফলতার সঙ্গে। কিন্তু তাতেও নিন্দুকেরা পিছু ছাড়তে নারাজ। ব্যাটে বড় রান নেই এই তীরে বিদ্ধ করে এসেছেন অধিনায়ককে। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই সবকিছুকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন দ্বিতীয় বলেই।

ফাইনালে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন রোহিত (Rohit Sharma)। একের পর এক বল পাঠাচ্ছিলেন স্ট্যান্ডে। ‘২৫-৩০ রান করেই খুশি’ ধরণের মন্তব্যকে পাঠাচ্ছিলেন বাউন্ডারির বাইরে। তিনি দ্রুত রান তোলার কারণেই ভারতের ওপর কখনই চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড স্পিনাররা। রোহিতের ইনিংসেই অর্ধেক ম্যাচ পকেটে পুড়ে ফেলে ভারত। যেভাবে এগোচ্ছিলেন তাতে সেঞ্চুরি ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। শুভমন গিলের সঙ্গে তাঁর ১০৫ রানের ওপেনিং জুটিতে গিলের অবদান ছিল মাত্র ৩১ রান। এর থেকেই বোঝা যায় কতটা দাপটের সঙ্গে রবিবার খেলেছেন রোহিত। আসলে মানুষের যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন মানুষ একটা শেষ চেষ্টা করে ঘুরে দাঁড়ানোর। রোহিতও ফাইনালের মঞ্চকেই বেছে নিয়েছিলেন সব জল্পনা-কল্পনা-সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য। ম্যাচ শেষে গর্বিত অধিনায়ক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সদর্পে জানিয়ে দিলেন এখনই অবসর নয়। তিনি থাকছেন।
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
তাঁকে (Rohit Sharma) যে থাকতে হবেই। টি-২০ বিশ্বকাপটা চলে এসেছে, চলে এসেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটাও। কিন্তু একটা পুরনো হিসেব যে বাকি রয়ে গিয়েছে। জেতা বাকি একদিনের বিশ্বকাপটা। খেলোয়াড় হিসেবেও যে অধরা থেকে গিয়েছে ওটা। আর জীবন? জীবন তো বরাবরই ফিরিয়ে দিয়েছে সকলকেই যার যা প্রাপ্য। আসলে আমাদের জীবনটা একটা বৃত্ত। যে বৃত্ত ঠিক সময়ে সম্পূর্ণ হবেই। শুধু অপেক্ষা করতে হবে। হাল ছাড়লে চলবেনা। স্বপ্ন বুনে চলতে হবে। প্রতিটা ক্ষেত্রে জীবন তোমাকে রক্তাক্ত করে তুলবে, ক্ষতবিক্ষত করে তুলবে। কিন্তু তোমাকে সাঁতরে যেতেই হবে। ২৮ বছর…১৭ বছর…বা ১৩ বছর…বা ১২ বছর জীবনের বৃত্ত ঠিক এসে মিলবে আবর্তন শেষে। মিলবেই… আর ফিরে আসবে এই স্বপ্নমধুর মায়াবী রাতগুলো।