নিউজ পোল ব্যুরো: একটা সময় ছিল যখন নববর্ষ মানেই ছিল ঘরে ঘরে নতুন ঝকঝকে পঞ্জিকা। ওই চৌকো বইটায় ছড়িয়ে থাকত বাঙালির ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসবের দিনক্ষণ আর জীবনযাত্রার ছন্দ। আর পঞ্জিকা (Almanac) মানেই ছিল গুপ্তপ্রেস। কিন্তু আজকের দিনে সেই বাঙালিকে ঘিরে রয়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর গুগল। তবুও, চৈত্রের রোদ গায়ে মেখে পয়লা বৈশাখের আগে পঞ্জিকার খোঁজ ঠিকই ফিরে আসে। শুধু বদলেছে তার ধরন, বদলেছে ভাষা। আজকের ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া, জেন জেড (Gen Z Bengali) প্রজন্ম বাংলা বোঝে ঠিকই, কিন্তু বাংলা পড়তে গিয়েই হোঁচট খায়। আর এই নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার কর্ণধার অরিজিৎ রায়চৌধুরি (Arijit Raychaudhuri)। বাংলা নববর্ষ আসতে আর মাত্র ছ’দিন বাকি। আর তার আগেই বাজারে আসছে বাংলার ইতিহাসে প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পঞ্জিকা (English Panchika for Bengali Calendar)।
আরও পড়ুন:- Mamata Banerjee : “অন্যের সম্পত্তি নেওয়ার অধিকার আমারও নেই!”
এতে পাওয়া যাবে কোন রাশির জন্য কোন দিন শুভ (Auspicious Days for Zodiac Signs), কবে একাদশী (Ekadashi Dates), কবে বেগুন খাওয়া নিষেধ (Prohibited Food Days) — সবকিছু ইংরেজিতে, অথচ সম্পূর্ণ বাংলা রীতি মেনে তৈরি। অরিজিৎ রায়চৌধুরি জানান, “নতুন প্রজন্মের অনেক বাঙালি গুগলে (Google Search) পঞ্জিকা খোঁজে, কিন্তু সেখানে যা মেলে তা বেশিরভাগই অন্য রাজ্যের ক্যালেন্ডার (Non-Bengali Calendars)। বাংলার মাস, বছর, তিথি, নক্ষত্র সবই আলাদা। তাই আমাদের গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকাকেই ইংরেজিতে ছাপা হচ্ছে, যাতে এই প্রজন্ম নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে সহজে যুক্ত থাকতে পারে।” ১৮৬৯ সালে দুর্গাচরণ গুপ্তের (Durgacharan Gupto) হাত ধরে শুরু হয়েছিল গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার পথচলা। এবার পা দিল ১৫৬ বছরে (156 Years of Guptapress Panchika)। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাপাখানা উঠে গেলেও পঞ্জিকার (Almanac) কদর কিন্তু এতটুকু কমেনি। বরং, এখন ছাপা পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইনেও (Online PDF Panchika) মিলছে পঞ্জিকা। বহু মানুষ এখন হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কিংবা ইমেলেই (Email Delivery) চাইছেন পিডিএফ পঞ্জিকা। বিনিময় মূল্য? ২৫০ টাকা মাত্র।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT
একসময় কলেজ স্ট্রিটের ছাপাখানায় ৮০ জন কর্মচারী কাজ করতেন। এখন সেই ছাপাখানা অতীত হলেও, বাইরের প্রেসে সূর্য সিদ্ধান্ত (Surya Siddhanta Based Calculation) অনুযায়ী ছাপা হয় পঞ্জিকা। বর্তমান শাস্ত্রজ্ঞ অচিন্ত্য ভট্টাচার্য (Achintya Bhattacharya) গণনা করেন এই পঞ্জিকা, যেমন আগে করতেন তাঁর দাদু। বর্তমানে পঞ্জিকার দাম ২০০ টাকা হলেও এর ঐতিহ্য ও আবেদন অমূল্য। শুধু বাংলার বাঙালিরাই নয়, ওড়িশার কটক, উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ ও বারাণসী, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বই, জয়পুরের মতো শহরে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিরাও নববর্ষ এলেই খোঁজ করেন এই পঞ্জিকা (Almanac)। একটা সময় ১ টাকা, ২ টাকা দামের পঞ্জিকা আজ পৌঁছেছে দুই শতকে। আর এবারের সংযোজন — ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত বাংলা সংস্কৃতির বার্তাবাহী এক ঐতিহ্য।