নিউজ পোল ব্যুরো: পুরুলিয়ার পাড়া থানার অন্তর্গত আনাড়া গ্রাম যেন আজ নীল ষষ্ঠীর দিন এক পূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে। চারপাশে উৎসবের আমেজ, ভক্তদের মুখে একটাই নাম—বাবা বানেশ্বর। বহু প্রাচীন কালের এই মন্দির এখনো তার জাগ্রত উপস্থিতি নিয়ে ভক্তদের মনে এক অলৌকিক বিশ্বাস গেঁথে রেখেছে। আর আজ নীল ষষ্ঠী (Neel Sasthi 2025) উপলক্ষে সেই বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটছে। ভক্তদের ঢল নেমেছে মন্দিরে।

আরও পড়ুন:- Hanuman Jayanti 2025: জানেন কি? কেন দুবার পালিত হবে হনুমান জয়ন্তী?
বাংলা নববর্ষের আগেই বাঙালির এক গুরুত্বপূর্ণ আচার—নীলপুজো বা নীলষষ্ঠী। ২০২৫ সালে এই বিশেষ দিনটি পড়েছে ১৩ এপ্রিল, রবিবারে। পরের দিন অর্থাৎ সোমবার শুরু হচ্ছে নতুন বাংলা বছর। তাই পুরনো বছরের অন্তিম লগ্নে এবং নববর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাঙালির এক আধ্যাত্মিক অনুভব—এই নীলপুজো।পুরাণ অনুযায়ী, চৈত্র মাসের এই ষষ্ঠী তিথিতে মহাদেবের সঙ্গে নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এই উপলক্ষেই দিনটির নাম হয় “নীলষষ্ঠী”, (Neel sasthi 2025) এবং মহাদেবের পুজো করার প্রথা শুরু হয়। যেহেতু এর ঠিক পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি, আর তারপরই নববর্ষ, তাই এ যেন পুরনোকে বিদায় ও নতুনকে স্বাগত জানানোর আগমুহূর্তে শুদ্ধিকরণের এক আচার।গ্রামবাংলায় এই সময়ে গাজনের উৎসবও জমে ওঠে। চরকপূজোর (Charak Puja) আয়োজন, শিবভক্তদের ভক্তিমূলক গান, নৃত্য আর মেলায় ভরে ওঠে জনপদ।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT

লোককথায় জানা যায়, বহু বছর আগে এক ধার্মিক ব্রাহ্মণ দম্পতির জীবনে নেমে আসে সন্তানহানির বিপর্যয়। অসীম ভক্তি ও প্রার্থনা সত্ত্বেও তারা সন্তান লাভে ব্যর্থ হন। অবশেষে তারা কাশীতে গিয়ে বাস করতে শুরু করেন। একদিন গঙ্গা স্নানের পর, ব্রাহ্মণী ঘাটে বসে থাকলে, এক বৃদ্ধা এসে জিজ্ঞাসা করেন—তিনি এত বিমর্ষ কেন? নিজের দুঃখের কথা জানালে, বৃদ্ধা তাঁকে বলেন চৈত্র সংক্রান্তির দিন উপবাস করে শিবপুজো করতে। প্রদীপ জ্বালিয়ে, সন্ধ্যাবেলায় জল গ্রহণ করতে। ব্রাহ্মণী কথামতো আচরণ করলে, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সন্তান লাভ করেন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, সেই বৃদ্ধা আসলে ছিলেন দেবী ষষ্ঠী স্বয়ং। এরপর থেকেই নীল ষষ্ঠী ব্রত (Neel Sasthi Brata) বিখ্যাত হয়ে ওঠে, মায়েরা সন্তানদের মঙ্গল কামনায় পালন করেন এই উপবাস।
কীভাবে করবেন নীলপুজো? নীলপুজো বা নীলষষ্ঠীর (Neel Sasthi 2025) ব্রত পালন করার সময় কিছু নিয়ম মেনে চললে শিবের আশীর্বাদ সহজলভ্য হয়।
নীলপুজোর নিয়মাবলী:
-সকালে গঙ্গাজলে কাঁচা দুধ, কাঁচা হলুদ এবং সাদা চন্দন মিশিয়ে শিবলিঙ্গে অর্পণ করুন।
-মধু, দুধ ও গঙ্গাজল একসঙ্গে মিশিয়ে তা শিবলিঙ্গে নিবেদন করুন।
-২৮টি বেলপাতার উপর সাদা চন্দন মেখে শিবলিঙ্গে নিবেদন করা শ্রেয়।
-সারাদিন উপবাস রাখার পর সন্ধ্যায় জলাভিষেক করে, শিবকে সাদা ফুল ও একটি মৌসুমী ফল নিবেদন করুন।
-সম্ভব হলে, অপরাজিতা বা আকন্দ ফুলের মালা উৎসর্গ করুন। সন্তানের মঙ্গলকামনায় একটি মোমবাতি জ্বালান।
-উপোস ভাঙার সময় ফলমূল, সাবান বাদাম, এবং খাঁটি ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিশ্বাস করা হয়, নিষ্ঠা ও নিয়মে এই ব্রত পালন করলে, ভগবান ভোলেনাথ (Lord Shiva) ভক্তের সমস্ত কামনা পূরণ করেন।

পুরুলিয়া পাড়া থানার এই মন্দির প্রায় পাঁচশো বছর প্রাচীন (Ancient Shiva Temple)। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেই নয়, দুর-দুরান্তের মানুষদের কাছেও এক গুরুত্বপূর্ণ পূণ্যস্থানে পরিণত হয়েছে। নীল ষষ্ঠী (Hindu Religious Festival) এমন এক বিশেষ তিথি, যেদিন মা মনসার কৃপালাভের আশায় বহু মানুষ ব্রত পালন করেন, আর শিবের এই জাগ্রত রূপ—বাবা বানেশ্বর—এর দর্শন করেন তারা।নীল ষষ্ঠীকে কেন্দ্র করে আনাড়া গ্রামে চলে সাতদিন ব্যাপী মেলা (Religious Fair in West Bengal)। মেলার মধ্যেই রয়েছে গ্রামীণ হস্তশিল্প, নানা ধরনের খাবারের দোকান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং লোকসংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ।