নিউজ পোল ব্যুরোঃ সেতু মানেই সম্পর্কের মেল বন্ধন, জোড়া লাগে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কিন্তু শুধুই কি তাই? শুধু জোড়া লাগানো নয় কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেতু মানেই জীবিকা নির্বাহনের একমাত্র ভরসা। কারণ এই সেতুই না থাকলে হয়তো চিরটাকাল অসুবিধাতেই কাটাতে হতো শহরতলী থেকে সুদূরে থাকা অঞ্চলগুলোকে।
কিন্তু সেই সেতুর নামকরণেকে এবার তুমুল শোরগোড়।
এই সেতুর কারণেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এক যুবক তবু এমন নামকরণে অবাক হচ্ছেন অনেকেই। সেতুর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিয়ার লটারি’। কিন্তু কেন? লটারি সাথে কি সম্পর্ক তার জানেন কি? নামকরণের পিছনে লুকিয়ে থাকা অভিমান-কষ্টের কথা জানলে চমকে যাবেন আপনিও।
ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার বান্দিপুর গ্রামের। বান্দিপুর গ্রাম এবং মনোহরপুর গ্রাম এলাকার মধ্যবর্তী এলাকায় রয়েছে এই সেতু। মূলত শিলাবতী নদীর ওপরে তৈরি এই সেতু। যা দীর্ঘকাল যাবৎ ছিল কাঠের পাটাতন।
কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়েই দিনের পর দিন কষ্ট করে হাঁটাচলা করতে হতো এলাকাবাসীদের। মনে আতঙ্ক নিয়ে পার করতে হতো বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলকেই। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি কোনবারেই।
এদিকে দুই গ্রামের একমাত্র সংযোগস্থল হওয়ার কারণে কিছুতেই বাদ দেওয়া যাচ্ছিল না পুরনো সেতুটিকে। আতঙ্ক নিয়ে কাটাত সংলগ্ন প্রায় ৩০ টি পরিবার।
অভিযোগ থেকে বাড়তে থাকে ক্ষোভ, পথ হিসেবে বেছে নেওয়া হয় প্রতিবাদের কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি শেষমেষ। দিন বাড়ছে থাকে ক্ষোভ ক্রমশ বদলাতে থাকে তীব্র অভিমানে, তবু আশা ছাড়েননি গ্রামবাসী। বারে বারে নতুনভাবে সেতু নির্মাণের আবেদন করা হয়।
সম্প্রতি এই সেতু থেকে পড়েই এক যুবক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এমনটা জানা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে তিনি কটকে চিকিৎসারত। এছাড়াও একাধিকবার গ্রামের একাধিক মানুষ গিয়েছেন জলের নিচে, এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। আর এই ঘটনাগুলোকে মাথায় রেখেই নামকরণ হয়েছে সেতুর। সেতুর সঙ্গে লটারির মিল খুঁজে পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। লটারির যেমন নিশ্চয়তা নেই তেমনি এই ব্রীজ নির্মাণেরও নিশ্চয়তা নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবু সুখ পাওয়ার আশায় চালিয়ে যাচ্ছেন চেষ্টা।
বীজ নির্মাণকে তাঁরা পুরস্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন ঠিক এই কারণেই। তবে লটারির পুরস্কার পাওয়া তো ভাগ্যের বিষয় কিন্তু সেতু নির্মাণ করানো কি আদেও কি ভাগ্যের ওপর। কেন নজর দেওয়া হচ্ছে না এই এলাকায়? স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন।
গ্রামবাসীদের অভিনব এই বিক্ষোভ নজর কেড়েছে গোটা বাংলার। ক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রামবাসীরা বলেন, প্রথম পুরস্কার মৃত্যু, দ্বিতীয়টি আজীবন শয্যাশায়ী ও তৃতীয়টি বহু অর্থ ব্যয় কোনও রকমে বেঁচে থাকা। আপাতত এভাবেই কাটছে দিন, কংক্রিটের ব্রিজের দাবিতে এখনও আশায় বুক বাঁধছেন গ্রামবাসীরা।