বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: এলেন, খেললেন, কিন্তু জয় আদতেই করলেন কি? ট্রফিজয় হয়ত অসংখ্য করেছেন গোটা কেরিয়ারে। সেইসঙ্গে অসংখ্য অনুরাগীদের হৃদয়ও। তবু এরপরেও কোথাও যেন একটা বড় ফাঁক রেখে গেলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। টেস্ট ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তাই থাকছেই।
আরও পড়ুনঃ IPL 2025 : পাক সন্ত্রাসে টুর্নামেন্ট স্থগিত! মিলেমিশে একাকার ICL ও IPL
একদিকে আইপিএল (IPL 2025)। অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের (Indo-Pak War) আবহ। দুয়ের মিশেলে দেশবাসীর ফোকাস যখন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ওপর থেকে পুরো সরে গিয়েছে ঠিক তখনই অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) জানিয়ে দেন লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন তিনি। দুদিন যেতে না যেতেই একই পথের পথিক ‘রোকো’ জুটির ‘কো’-ও। বোর্ডের (BCCI) শত অনুরোধেও গললেন না কোহলি (Virat Kohli)। না তো না-ই। আসন্ন সফরে রোহিত-বিরাটহীন ভারতকেই (Indian Cricket Team) নামতে হবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে।

অথচ এমনটা কি সত্যিই কথা ছিল? হ্যাঁ, এতে কোনও সন্দেহই নেই যে কিংবদন্তিরা জানেন কখন কোথায় থামতে হয়। আর বিরাটও (Virat Kohli) সেই ধারাই অনুসরণ করেছেন। গত অস্ট্রেলিয়া সফরে বারবার পুরনো রোগে ভুগে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ধাওয়া করা কিং কোহলি শুনতে পাচ্ছিলেন ক্লান্ত পুরাতন বরষের সর্বশেষ গান। সেইমত জানিয়েও দেন সতীর্থদের, অনেক হয়েছে, আর নয়। অস্ট্রেলিয়ায় পার্থের প্রথম টেস্টে শতরান বাদ দিলে গোটা সিরিজে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ বললেও কম বলা হয় বোধহয়। ৯ ইনিংসে ১৯০ রান, গড় মাত্র ২৩.৭৫।
এরপর সত্যিই হয়ত বিরাটের বিরাট সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই। তবু জানানো যাচ্ছে কোথায়? মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১২ সালের সেই অনুষ্ঠানটির কথা। সেলিব্রেটি পরিবৃত সভায় সদ্য এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শততম শতরান হাঁকিয়ে আসা সচিন টেন্ডুলকরকে (Sachin Tendulkar) যখন জিজ্ঞেস করা হয় তাঁর রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেন কি না, মাস্টার ব্লাস্টার নির্দ্বিধায় করেছিলেন দুটি নাম। যার মধ্যে রোহিত শর্মা অনেকটাই পিছনে পড়ে থাকলেও এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরাটের শতরানের সংখ্যা ৮২। টেস্ট খেলা চালিয়ে গেলে সচিনের রেকর্ড যে তিনি ভেঙে দিতেনই, এমনটা বলছি না। কিন্তু তাঁর এহেন বৈরাগ্যে কি সচিনের সঙ্গে কিছুটা হলেও অন্যায় করা হচ্ছে না? তিনি এতবড় মন্তব্য করেছিলেন বিরাটকে নিয়ে। বিরাটের সিদ্ধান্তে কি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না সে কথার মান?

শুধু সচিন কেন, নিজের সঙ্গেও কি খুব ন্যায় করছেন বিরাট? সচিনের শত শতরানের রেকর্ড স্পর্শ করা না হোক, ১৪ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে কম কিছু কি অর্জন করেছেন কোহলি (Virat Kohli)? সবথেকে বড় কথা, যেভাবে উঠে এসেছেন তিনি। ২০০৮ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ বিরাটের নেতৃত্বে ভারত জিতলেও সেই দলের সেরা ব্যাটার মোটেই ছিলেন না তিনি। বরং বাঁহাতি তন্ময় শ্রীবাস্তবকেই মনে করা হচ্ছিল ভবিষ্যতের সম্ভাব্য তারকা। কিন্তু তারপর কালের স্রোতে তন্ময় হারিয়ে গেলেও ধাপে ধাপে বিরাট যেভাবে নিজেকে ক্রিকেট নামক এভারেস্টের সর্বোচ্চ পয়েন্টে নিয়ে গিয়ে কিং কোহলিতে পরিণত হয়েছেন তা কোনও রূপকথার থেকে কম নয়। লেট নাইট পার্টি— যা নাকি একসময় ছিল রোজকার রুটিন— সেই অভ্যাস ছুঁড়ে ফেলতে দুবার ভাবেননি। এমনকি নিজেকে ফিটনেসের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যেতে নিজের পছন্দের খাবারদাবারগুলি পর্যন্ত বাদ দিয়ে দিয়েছেন জীবন থেকে। আর ইদানিং তো শুধু শাকপাতাই পাতে থাকে তাঁর।
সেই কোহলিকেই এবার শুনতে হচ্ছে, ইংরেজ পেসারদের মুখোমুখি হতে চান না বলেই নাকি তড়িঘড়ি অবসর নিচ্ছেন টেস্ট থেকে। রবিবার সামাজিক মাধ্যমে এই পোস্ট করা হয়েছে কাউন্ট ক্রিকেটের পক্ষ থেকে। ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে গাস অ্যাটকিনসন এবং জশ টাংয়ের বিধ্বংসী বোলিং দেখানো হয়েছে। যার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আমরা তোমাকে দোষ দিচ্ছি না বিরাট।” অর্থাৎ এটাই বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে এই পেসারদের ভয়েই বিলেত সফরের আগে অবসর নিচ্ছেন কোহলি।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের লিংক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=Ygy6shQubNhWstbr
এই ধরণের বিদ্রূপ কেন শুনতে হবে ‘ফ্যাভ ফোরে’র অন্যতম শরিককে? গত ৫ বছরে ব্যাটিং গড় পাতে দেওয়ার মত নয়, খুব সত্যি কথা। একটা সময় বিরাটের গড় ছিল ৫৫.১০। যা এখন ৪৬.৮৫। অর্থাৎ আর পারছেন না বলেই সরে পড়ার সিদ্ধান্ত। খুব ভাল কথা। কিন্তু কিং কোহলিকে কেন না পেরে সরে যেতে হবে? কেন কাটাতে পারবেন না চতুর্থ স্টাম্পের বল খোঁচা দেওয়ার প্রবণতা? কিংবা লেগস্পিনারের বিরুদ্ধে দুর্বলতা। কিংবদন্তিরা জানেন কখন কোথায় থামতে হবে, এ কথা যেমন সত্য। একইভাবে তাঁদের বানপ্রস্থ যাত্রা তুমুল জয়ধ্বনির মধ্যে দিয়ে হবে, সেটাও তো দস্তুর। বলতেই হচ্ছে, নিজের প্রতি অনেক বড় অন্যায়— অনেক বড় অবিচার করেই টেস্ট ক্রিকেটকে আলবিদা বলছেন বিরাট (Virat Kohli)। যদি এভাবেই ছাড়তে হত তাহলে এত আত্মত্যাগ, এত আত্মনিবেদনের প্রয়োজন কী ছিল? যে পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন কোহলি তারপর আর এই অবসর কোনও মতেই মানায় না তাঁকে।