দুঃখের খোঁজ রাখে কয়জনে!

বিনোদন

রইলো কিংবদন্তির অবাক করা কাহিনী

নিউজ পোল ব্যুরো: বিশ্ব পরিচিত এই মুখশ্রী, ঘুমের ঘোরে মনে পড়লেও, হেসে ওঠেন আপনি!
যিনি আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের মুখে অনবরত ফুটিয়ে গেছেন হাসি, কিন্তু নিজে থেকেছেন এক বুক দুঃখের সাগরে। কাউকেই বুঝতে দেননি ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের যন্ত্রনা।

সারা জীবন মানুষকে নিস্তব্ধতায় হাসিয়ে গিয়ে, ডিপ্রেশনগ্রস্ত মানুষদের মুখে নিঃশব্দে হাসি ফোটাতে লুকিয়েছিলেন কেবল দুঃখ। যিনি তাঁর নির্বাক অঙ্গভঙ্গিতে নিমেষেই হাসিয়ে দিতে পারতেন সকলকে, তিনি কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন। পরিচালক ও সুরকার হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে আছে গোটা বিশ্বে।

কিন্তু জানেন কি?? অসংখ্য মানুষদের বে-রঙিন সাদা কালো জীবনে একগাল হাসি ফোটানো এই মানুষটির জীবন কিন্তু রঙিন ছিল না একেবারেই! বরঞ্চ তাঁর জীবন কাহিনী শুনলে চোখে জল আসবে আপনারও!

বুকে পাথর রেখে জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটাতে হয়েছিল কষ্টে। এই মানুষটিকেও ফাঁকি দেয়নি অভাবের গ্রহ নক্ষত্র! তবে সে সবের তোয়াক্কা না করেই তিনি অর্জন করেছিলেন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি।

গোটা জীবন জুড়েই তিনি পেয়েছিলেন একের পর এক আঘাত! বাল্যকাল থেকেই সংগ্রাম পূর্ণ জীবন কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। তবু থামেনি পথ চলা। বিপদের ধাক্কা সামলেই, সকলের মুখে হাসি ফোটাতে উজাড় করে দিয়েছিলেন নিজেকে।

আসলে নিত্যদিন আমাদের সকলের চোখের সামনে থাকা সবচেয়ে হাসিখুশি চেহারা গুলোর পেছনের ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী বোধহয় এমনই হয়!

যদিও চার্লি চ্যাপলিনের মৃত্যু কাহিনীকে ঘিরে থাকা রহস্যময় জটিলতার কথা আপনারা সকলেই কম বেশি জানেন হয়তো। কিন্তু তাঁর এই হাসিখুশি পর্দার পেছনে ঢাকা কষ্টে ভরা জীবন কাহিনী ক’জনই বা জানেন?

মাত্র ছয় বছরের শিশুকে মদ্যপ অবস্থায় ছেড়ে চলে যান বাবা। পরিবারের নেমে আসে অভাব অনটন। ক্ষুদার্থ পেটে অসহায় শিশু খুঁজে বেড়াতো বাবাকে। সম্বল বলতে ছিল শুধুই মা।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে অভাবের কারণে, ঠিক মতো খেতে না পেয়ে মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায় মায়েরও। তিনি বলতেন, মা পাগলা গারদে থাকাকালীন তাঁর জীবনটা ছিল সবচেয়ে বেশি কষ্টের।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি এও বলেন – ‘ক্ষুধা কী জিনিস এটা কোন পরিচালকের কাছ থেকে শিখতে হয়নি। ক্ষুধার্থ মানুষ আমার কাছে খুবই পরিচিত চরিত্র।’

ছেলেবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছিলেন বাবা-মায়ের আদর ছাড়া। অন্যদিকে, আবার সাংসারিক জীবনেও মেলেনি শান্তি! আসলে খুব স্বল্প বয়স থেকেই তিনি জীবনটাকে অনুভব করেছিলেন একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্রের মত করে!

তাইতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জ্যাক লন্ডন বলেছিলেন, ‘চার্লি ছিলেন এমনই এক বালক যার বাল্যকাল বলতে কিছুই ছিল না।’ এরপর এভাবেই কাটতে থাকে দিন, জীবনে আসে প্রথম প্রেম। ১৯ বছর বয়সে প্রেমে পড়েন হেটি নামের এক বালিকার।

কিন্তু মাঝখানে কিছু কারণে তাঁকে পাড়ি দিতে হয় আমেরিকায়। এরই মাঝে ঘটে যায় অঘটন! ফিরে এসে দেখেন হেটি বিবাহিত!

কষ্ট পেরিয়ে, জীবনে যখন একটু একটু করে আসছিল ভালবাসার স্বাদ, ঠিক তখনই আবারও কাঁচের টুকরোর মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল সমস্তটা!

কারোর ভালোবাসাই তাঁর জীবনে কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মানুষটির বৈবাহিক জীবনটাও ছিল বড়ই অশান্তির। সুস্থ পারিবারিক জীবন পেতে, ভালোবাসার খোঁজে বসেছিলেন চার বার বিয়ের আসরেও। যার মধ্যে টিকে ছিল শেষেরটা।
এত কষ্টে জীবনটা কাটিয়ে গেলেও তিনি কিন্তু থেমে যাননি কখনই।

লড়াকু মনোভাবাপন্ন চার্লি চ্যাপলিন, জীবনে বারবার হোঁচট খেয়েছেন ঠিকই, তবে আবারও উঠে দাঁড়িয়েছেন হাসিমুখে।
মনোবল এতটাই শক্তপোক্ত ছিল…. যে, কোনও বিপদই থামিয়ে দিতে পারেনি তাঁকে।

সকল বাধাকে উপেক্ষা করে হাসিয়ে গিয়েছেন সকলকে। চোখের জল নয়, দুঃখ ভরা জীবন কাহিনীও নয়! বরং নিজের পরিচয় গড়েছিলেন সকলের মুখে হাসি ফুটিয়ে।