Shubham Rathore: শুভম শুধু একটা নাম নয়, বঞ্চিত শিশুদের রোল মডেল রাজস্থানের শুভম

দেশ

নিউজ পোল ব্যুরো: এ যেন অনেকটাই জীবন বদলে দেওয়ার গল্প। এ যেন অনেকটাই গল্প হলেও সত্যি। তাই সত্যি বলতে দ্বিধা নেই সেদিনকার ১৩ বছরের শুভমের (Shubham Rathore)। রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশের মন্দাসৌরে ছুটে গিয়েছিল বছর ১৩ র শুভম শুধুমাত্র এক প্লেট খাবারের জন্য।

আরও পড়ুন: Ahmedabad Plane Crash: AI-171 বিমানে নিশ্চিত ছিল লন্ডন সফর, তাও যেভাবে প্রাণে বাঁচলেন ষাটোর্ধ ব্যক্তি

রাতের শিফটে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে পয়সার পরিবর্তে মিলতো মাত্র এক প্লেট খাবার। সেটাই ছিল ছোট্ট শুভমের (Shubham Rathore) কাছে স্বর্গ সুখ। ধাবায় ছিল রকমারি মানুষের আনাগোনা। আজতো শুভমের বয়সী অনেকেই। অধিকাংশই বাবা-মার হাত ধরে। খাবার দেওয়ার সময় সবই লক্ষ্য রাখত সে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করা ছিল বারণ। বুকের ভিতর চেপে রাখত অব্যক্ত যন্ত্রণা। ১৩ বছর বয়সটা যে হেসে খেলে বেড়ানোর বয়স। পড়াশোনা করে জীবন তৈরি করার বয়স। কিন্তু বিধি বাম ছিল শুভমের ক্ষেত্রে। সে সময় পূর্ণিমার চাঁদ ও তার কাছে মনে হতো যেন ঝলসানো রুটি। সারাদিন শো অপেক্ষা করত কখন সন্ধ্যা নামবে। কখন সে কাজে যোগ দেবে। রাতের শেষে মিলবে এক প্লেট খাবার। আসলে আর পাঁচটা পথে বেরিয়ে পড়া শুভমদের কাছে পেট যে বড় বালাই।

এটাই যখন শুভম (Shubham Rathore) ধরে নিয়েছিল নিয়তির পরিণতি ঠিক তখনই পরিবর্তন আসলো শুভমের জীবনে। ২০০৯ সালের মে মাসে। শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করা নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর বাচপান বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীদের চোখে পড়ে যায় শুভম। ভাগ্যদেবী যেন ইউটার্ন নিল শুভমের জীবন থেকে।

ধাবা থেকে উদ্ধার করে শুভম কে নিয়ে আসা হয় বালক আশ্রমে। সেখানে শুভমের পরিচয় হলো বইপত্রের সঙ্গে। ভর্তিও হয় স্কুলে। ছোট্ট শুভম যেন বুঝতে শিখলো জীবনের মানে।

স্কুল জীবন থেকে শুরু হল শুভমের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। এ যেন অনেকটাই নিজের জেগে অন্যকে জাগানোর কাজ করতে শুরু করলো শুভম। শুরু হল বাল পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে শিশুদের অধিকার রক্ষার লড়াই।

ততদিনে কৈলাস সত্যার্থীর মানবিক স্পর্শে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে শুরু হল আলোয়ারে লক্ষ্মী দেবী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশুনা। আশ্রমিক জীবনে এবং স্কুল জীবনে বঞ্চিত শিশুদের অধিকারের জন্য যে লড়াই শুরু করেছিল শুভম (Shubham Rathore) সেই লড়াই জারি থাকল কলেজ জীবনেও। বরং কলেজে যুক্ত হল আরও একটি মাত্র। দরিদ্র অবহেলিত ছাত্রদের জন্য সে চালু করে বিনামূল্যে টিউশন।

বঞ্চিত শিশুদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আজ শুভম আইকন। বর্তমানে সে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফোএজ সেন্টার ফর এন্টারপ্রেনারশিপে ডেপুটি ম্যানেজার এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইয়ং ইন্ডিয়া ফেলো হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হাভার্ড, কেনেডি স্কুল, কলম্বিয়া সিপা এমনকি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর পক্ষ থেকেও ডাক পেয়েছে।

শিশুশ্রম নিয়ে যখন বিভিন্ন সেমিনারে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করা হয় তখন শহর কিংবা শহরতলীতে রাস্তার দু’ধারে কিংবা ছোট ছোট কারখানায় প্রতিদিন একটু একটু করে কেড়ে নেওয়া হয় হাজারো হাজারো শুভমদের শৈশবের অধিকার।

“যদি আমাকে উদ্ধার না করা হত, তাহলে আমি এখনও সেই ধাবায় বাসন মাজতাম। প্রতিটি শিশুর স্বপ্ন দেখার সুযোগ থাকা উচিত ” কথাগুলি একনাগারে বলতে বলতে ছল ছল করে ওঠে আজকের সফল শুভমের চোখ দুটো।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের লিংক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=vMpLfy5Rs_F9Qo5e