Ritwik Ghatak: একদিকে শিল্প, অন্যদিকে জীবন—ঋত্বিক ও মাধবীর টানাপোড়েন

অফবিট বিনোদন

নিউজ পোল ব্যুরো: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক (Ritwik Ghatak) ও মাধবী মুখোপাধ্যায়ের জুটি এক অনন্য অধ্যায়। ক্যামেরার সামনে যেমন দু’জনের সৃজনশীল সংঘর্ষ ছড়িয়ে দিত অস্বাভাবিক প্রাণ, পর্দার বাইরে তেমনি তাদের সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েন‑ভরা—শিল্পীসত্তার আদান‑প্রদান, মতের অমিল, আবার পারস্পরিক মমতার অদ্ভুত মেলবন্ধন। পরের পাতায় আমরা দেখব ঠিক কীভাবে এই দ্বৈত সম্পর্ক তাদের শিল্পকর্ম, ব্যক্তি‑জীবন ও অবিস্মরণীয় কিছু কৌতুককর উপাখ্যানকে—বিশেষত ‘ট্যাক্সিভাড়া’‑র গল্প—বেঁধে রেখেছে একই সুতোয়, যেখানে শিল্প আর বাস্তব জীবনের সীমারেখা বারবার মুছে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: Satyajit Ray: সত্যজিৎ রায়ের রসনা বিলাস: রাধাবল্লভি থেকে নলেন গুড়ের মিষ্টি পর্যন্ত

ঋত্বিক ঘটকের (Ritwik Ghatak) সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। কারণ, শুটিং চলাকালীন দৃশ্য বোঝাতে গিয়ে হঠাৎই ঋত্বিক বলে উঠতেন, “কী করতে হবে শুনলে ঠিকই, কিন্তু অভিনয় করতে পারবে তো?” প্রথমদিকে এমন মন্তব্যে রাগ হত মাধবীর। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, একজন শিল্পীর ‘আমিত্ব’ ভেঙে দিয়ে তাকে চরিত্রের গভীরে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্যই ঋত্বিক এমনটা বলতেন।

মাধবীর মতে, ঋত্বিক ঘটকের চরিত্র ছিল বহুস্তরীয়—একদিকে যেমন ছিলেন রসিক, তেমনই মুহূর্তে হয়ে উঠতেন গম্ভীর ও আবেগপ্রবণ। আগে থেকে বোঝার উপায় ছিল না, কখন তিনি কী মুডে থাকবেন। শুটিং ফ্লোরে প্রায়শই তাঁদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতো; নানা বিষয়ে চলত তর্ক। তবে মাধবীর উপলব্ধি—ঋত্বিকের এই অনির্ধারিত আচরণ আসলে ছবিটিকে নিখুঁত করে তোলারই চেষ্টা।

তবে মাধবীর বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করা ঋত্বিক মেনে নিতে পারতেন না। তিনি প্রায়শই রাগ করতেন এ নিয়ে। তখন মাধবী স্পষ্ট জানিয়ে দিতেন—সংসার ও দায়িত্বের কথা ভেবেই তাঁকে এমন ছবি করতে হচ্ছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্থ উপার্জন জরুরি।

ঋত্বিকের আরেকটি অদ্ভুত স্বভাব ছিল, হঠাৎই কলকাতা শহর চষে বেড়ানো। একদিনেই উত্তর থেকে দক্ষিণ, একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত—ট্যাক্সি ধরে বলতেন, “চালিয়ে যাও।” কিন্তু এই যাত্রার শেষে তাঁর গন্তব্য থাকত একটাই—মাধবী মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। সেখানে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতেন, কখনও কিছু না বলে।

ঋতুপর্ণ ঘোষকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাধবী জানান, সেসময় ঋত্বিক ঘটক প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন, মানসিক দিক থেকেও ভীষণভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। নিজের বাড়িতে তাঁর মন টিকত না। আর ট্যাক্সিভাড়া দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকাও থাকত না। তাই তিনি মাধবীর বাড়িতেই আসতেন, যেন শেষমেশ তিনিই ট্যাক্সির ভাড়া মেটান।

এই ঘটনা একদিনের নয়—বহুদিন ধরেই চলত এমন। মাধবী হেসে বলেছিলেন, “আপনি যখন বলেন, আমি কেন বাণিজ্যিক ছবি করি—তখন বলি, এই ট্যাক্সিভাড়া মেটানোর জন্যই তো!”

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT