নিজস্ব প্রতিনিধি কলকাতাও আসানসোল: দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে চার বছর পর কয়লা পাচার কাণ্ডের চার্জ গঠিত হল। আজ মঙ্গলবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ৪৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর আগে সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে মোট ৫০ জনের নাম ছিল। কিন্তু এই মামলায় অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পলাতক। সেই কারণে আজ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গঠিত হল চার্জ। এদিন বিকাশ মিশ্র-সহ তিনজনকে আদালতে ভারচুয়ালি হাজির করা হয়।
মঙ্গলবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে অনুপ মাজি ওরফে লালা-সহ মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে হাজির করানো হয় কয়লা পাচার মামলায় অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে। প্রসঙ্গত, যৌন হেনস্থার একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি বিকাশ। সেখান থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা দেন তিনি। এর আগে একাধিক কারণে বার বার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়টি ঝুলে ছিল।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছিল, গত শুনানিতে মামলাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগে ২৩ জনের নাম ছিল। অন্যটিতে ছিল ২৭ জনের নাম। প্রথম ২৩ জনের মধ্যে রয়েছেন অনুপ মাজি ওরফে লালা, রত্নেশ বর্মা এবং বিকাশ মিশ্র। এই তিনজনের বিচারপ্রক্রিয়া আলাদাভাবে হবে। কারণ, কয়লা পাচার মামলায় যত অভিযোগ উঠেছে, তার সব গুলোতেই ওই তিনজনের যোগ রয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি। বাকি ২৭ জনের মধ্যে কেউ কোলিয়ারির ম্যানেজার, কেউ নিরাপত্তারক্ষী, কেউ আবার স্থানীয় দোকানদার। ১০টি কোম্পানি ১২ জন ইসিএল আধিকারিক, ২০ জন লালার ব্যক্তিগত সহযোগী, ৪ জন কোলমাফিয়া। অনুপ মাজি, বিকাশ মিশ্র ও রত্নেশ বর্মা এদের বিরুদ্ধে চারটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় চার্জ গঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, অনুপ মাজির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ হল, ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে ইসিএলের লিজ হোল্ড এলাকা থেকে প্রায় ৩১ লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা চুরি করে তা পাচার করা হয়েছে। যার ফলে সরকারের প্রায় ১৩৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। নিজের লাভের জন্য নকল কাগজ তৈরি করে সেগুলিকে আসল বলে ব্যবহার করেছে অভিযুক্ত। এছাড়াও ইসিএলের বেশ কয়েকজন আধিকারিককে ঘুষ দিয়ে এইসব বেআইনী কাজ হাসিল করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, প্রত্যেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গোটা কাজটা সংগঠিত করেছেন অনুপ মাজি ওরফে লালা। বিচারক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি দোষী না নির্দোষ?’ এর উত্তরে লালা জানান, ‘তিনি নির্দোষ।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। রাজ্যে রেলের বিভিন্ন সাইডিং এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথমে আয়কর দফতর ও তার পরে সিবিআই এই কয়লা চুরি কাণ্ডের তদন্তে নামে। যার ভিত্তিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারপরে তাদের জেরা করে সেই মতো আদালতে মামলা চালানোর বিষয়ে একাধিকবার চার্জগঠনের দিন স্থির হলেও বিভিন্ন করাণে তা পিছিয়ে যায়। এই মামলায় সিবিআইয়ের তরফে ৩৯৬ জন সাক্ষী রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত ৫০ জন। প্রত্যেকের জন্য রয়েছে ২৫ হাজার পাতার নথি। রয়েছে ১১৪৯ পাতার তথ্যপ্রমাণ। এরই মধ্যে এই মামলায় সিবিআই মোট তিনটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। অবশেষে আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর চার্জ গঠিত হল।