নিজস্ব প্রতিনিধি, জয়নগর: পারদ পতনে বঙ্গে কনকনে ঠান্ডা। আর এই শৈত্যপ্রবাহে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এক বিশেষ ঐতিহ্য আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। শীতকালে বিভিন্ন রকমের শাকসব্জি পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের মতে এই শাকসব্জির গুরুত্ব অনেক। স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট উপকারি। তার সঙ্গে রয়েছে বাঙালির পিঠে-পুলি, মিষ্টি এবং অন্যতম আকর্ষণীয় খাবার নলেন গুড়। নলেন গুড়ের পায়েস বাঙালির কাছে এক আলাদাই আবেগ।
এখানে শীতকালে যে আবহাওয়া মাঝে মাঝে রৌদ্রজ্জ্বল আবার মাঝে মাঝে মেঘলা আকাশ। এই আবহাওয়ায় খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, পাঁপড় ভাজা আর পাঁচমিশালী আচার আহা মুখ জল নিয়ে আসে। এর পাশাপাশি রয়েছে বাঙালির একদম নিজস্ব আবেগ জয়নগরের মোয়া। মিষ্টির রাজ্যে এর জুড়ি মেলা ভার। এই শীতকালে নলেন গুড়ের গন্ধে যেমন প্রাণটা জুড়িয়ে যায় তেমনি সেই গুড় আর কনকচূড় ধানের খইয়ের তৈরি জয়নগরের মোয়ার স্বাদ অতুলনীয়।
আজ জয়নগরের এই মোয়া রাজ্য ছাড়িয়ে ভিনরাজ্য এমনকি বিশ্বের দরবারেও সমাদৃত। তবে আপনি কি জানেন এর মোয়া কিন্তু তৈরি হয় জয়নগরের কাছে বহড়ু গ্রামে। জয়নগর সংলগ্ন ‘বহড়ু’ গ্রামে এই মোয়ার আবির্ভাব।
জনশ্রুতি আছে এই মোয়ার আবিষ্কর্তা হলেন জয়নগর শহর নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা যামিনী বুড়ো। এই যামিনী বুড়ো একটি অনুষ্ঠানে নিজের ক্ষেতে চাষ করা কনকচূড় ধানের খই ও তার সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে মোয়া তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে সেই অনুষ্ঠানেই এসেছিলেন স্বয়ং মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব। তিনি সেই মোয়া সুখ্যাতি করেছিলেন তিনি। তারপর থেকেই সেই মোয়ার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে এটি ‘বহড়ুর মোয়া’ হিসেবেই পরিচিতি ছিল। তবে বহড়ুতে আসতে গেলে জয়নগর স্টেশনে নেমেই আসতে হবে। তাই সেই বাণিজ্যকরণের ফলে জয়নগরের নাম জুড়ে যায় মোয়ার সঙ্গে।
জানা যায়, ১৯২৯সালে পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ও নিত্যগোপাল সরকার জয়নগরের মোয়া তৈরির কারখানা এবং দোকান করেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই জয়নগরের মোয়া বিশাল খ্যাতি অর্জন করেছিল। বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে জিআই ট্যাগ পেয়েছে এই মোয়া। তৈরি হচ্ছে মোয়া হাব। যেখান থেকে এই মোয়া আরও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। আর দীর্ঘদিনের এলাকার বাসিন্দাদের দাবি পূরণে এই মোয়া হাব আগামী দিনে কতটা বাণিজ্য আনতে পারে তার দিকেই তাকিয়ে এলাকার এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষরা।