সৌমিতা মণ্ডল, কলকাতা : রবিবার শীতের সকাল এক অপূর্ব সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে। ঘন কুয়াশার আবরনে ঢাকা কলকাতার আকাশ। আলিপুর আবহাওয়া দফতর আগেই এই পূর্বাভাস দিয়েছিল। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার আকাশেও ঘন কুয়াশায় আবরণ। শীত ও কুয়াশার কারণে সকালে রাস্তায় লোকজন কিছুটা কম। কুয়াশা বেড়েই চলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। রোদ এসে গোমড়ামুখ করে বসে থাকে কুয়াশার ভারি দরজার সামনে। জানি সূর্য আসবে যথা সময়ে তাই শীতের এই ঝটিকা সফরকে স্বাগত জানাই মনে মনে।
উত্তুরে বাতাসে উত্তপ্ত এই শহরের শরীরটা জুড়িয়ে দিচ্ছে আর আমারা শহরবাসীরা এতদিন ধরে অনবরত অনলবর্ষণ করে আসা সূর্যটাকে শাপশাপান্ত করতে করতে ক্লান্ত হবার পর একটু জিরোবার অবকাশ পাচ্ছি। শীত আমাদের শরীরে যেসব চিহ্ন রাখতে শুরু করে তাতে তারা নিজেদের জীবনীশক্তি এবং স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
যারা শীতকাল ভয় পায় তারা কখনই শীতকাল উপভোগ করতে পারে না। শীত মানেই কষ্ট নয়, শীতকেও নিজের মতো উপভোগ করা যায় যদি পাশে বন্ধুরা থাকে। শীতকাল এলেই তো মজা বেড়ে যায় কারণ বর্ষায় বৃষ্টির কারণে তেমন মজা করা যায় না। শীতকাল যদি না থাকতো তাহলে মানুষের জীবনটা অনেক দুর্বিষহ হয়ে যেত। শীতের সকালে এক কাপ গরম চা যেন সবার সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেয় এক মুহূর্তে। এই শীতের সকালে শিশিরে পা রেখে চলার মধ্যে আছে এক নমনীয় অনুভূতি। শীতের দিনে শীতের সকালে খেঁজুরের রসের গন্ধে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু চোখ জুড়ানো শোভা যেন প্রকৃতি এক অন্যরূপে ধরা দেয়।
রাজ্যে শীতের দাপট অব্যাহত। একাংশে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, রবিবার পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা থাকছে। আগামী দু’দিন শীতের এই মেজাজ বজায় থাকবে। তার পরে ফের ২-৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর পাশাপাশি আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, শনিবার উত্তরবঙ্গে শীতের অনুভূতিতে এগিয়ে আছে দার্জিলিং পিটিও, এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে, দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে৭.৯ সেলসিয়াস। হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে ঝাড়গ্রাম, বীরভূম ও আসানসোলেও। এদিকে কলকাতার লাগোয়া নদিয়ার কল্যাণীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলা কালিম্পংকেও হারিয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, শীতকালে সমতল এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলে এবং স্বাভাবিকের থেকে তার ফারাক ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে এদিন পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামে শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শৈত্যপ্রবাহ না হলেও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাই পৌষের আগে ঠান্ডার আমেজে কাঁপছে। এর পাশাপাশি, কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন বদল হয়নি। এদিন মহানগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দমদমে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সেও শীতের দাপট চলছে। আলিপুরদুয়ারের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহবিদেরা জানিয়েছেন, শীত জমিয়ে পড়লেও পারদের পতন সে রকম হয় না। তাপমাত্রার পারদের পতন কিছুটা পড়লেও পরে ফের কিছুটা বেড়ে যায়। এরই মধ্যে আবার আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা পশ্চিম হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় আছড়ে পড়তে চলেছে। তার জেরে কিছুটা বাধা পেতে পারে উত্তরের বাতাস। উত্তরের বাতাস কমলে তাপমাত্রার পারদ নামাটাও কিছুটা হলেও বাধা পাবে। তবে হাওয়া অফিসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে সেই ঝঞ্ঝা কেটে গেলেই ফের উত্তর-পশ্চিম ভারতে জাঁকিয়ে শীত পড়বে। তখন ফের কনকনে উত্তরের বাতাসে কাঁপবে বাংলা।