নিউজ পোল বিনোদন ডেস্ক: চলে গেলেন কিংবদন্তি তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন। প্রায় এক সপ্তাহ আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখানকার আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। কলকাতায় তাঁর একটি অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল। কিন্তু আচমকাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেই অনুঠান বাতিল করতে হয়।
যদিও গতকাল রাতেই তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে| তারপরই তাঁর ভাগ্নে ও তাঁর ম্যাজার জানান যে তখনও তিনি বেঁচে আছেন| কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রকের এক্স-হ্যান্ডেলে পোষ্টও হয় জাকির হুসেনের মৃত্যুর খবর,তারপর পরিবারের তরফে জানানোর পর তা সরিয়ে দেওয়া হয়|
কিংবদন্তি তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন বংশ পরম্পরায় তাঁরা ধারা বজায় রেখেছিলেন। পিতা ছিলেন আরেক বিখ্যাত তবলিয়া ওস্তাদ আল্লারাখা খান। তাঁর সুযোগ্য পুত্র জাকির হোসেন সাত বছর বয়সেই তবলা বাজিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ১২ বছর বয়সের আগেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর তবলা বাদন সকলের মন জয় করে নেয়।
ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীতে তাঁর অবদান গুণগ্রাহী রসিক শ্রোতাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওস্তাদ জাকির হোসেন
ভারত ও আন্তর্জাতিক একাধিক সিনেমাতেও তাঁর অবদান রেখে গেছেন।
কিংবদন্তি এই তবলা বাদক প্রায় ৪ দশক আগে পরিবার নিয়ে সান ফ্রান্সিসকোতে চলে যান। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বই শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা আল্লারাখা খান, মা ববি বেগম। তাঁর আরও ৬ জন ভাইবোন রয়েছেন। তাঁরা হলেন তাউফিক কুরেশি, ফজল কুরেশি, খুরশিদ ঔলিয়া, রুহি বানু, রাজিয়া খান। ১৯৭৮ সালে অ্যান্টনিয়া মিনেকোলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর সন্তান, ইসাবেলা কুরেশি, আনিসা কুরেশি।
১৯৮৮ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান। ২০০২ সালে পান পদ্মভূষণ সম্মান। আর ২০২৩ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হয়। ভারতীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। সাতবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন। তার মধ্যে ৪ বার এই অ্যাওয়ার্ড পান কিংবদন্তি এই তবলা বাদক। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংস্কৃতি মহলে।
ওস্তাদজির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের ছায়া সঙ্গীত মহলে। বিশিষ্ট তবলা বাদক পণ্ডিত প্রদীপ ঘোষ জানান, ‘আমার কাছে কোন ভাষা নেই। এটা কেবলমাত্র ভারতের ক্ষতি নয় সারা পৃথিবীর ক্ষতি।’ উনার সম্প্রতি কলকাতায় আসার কথা ছিল একটি অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য। উনার সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছিল একবার তিনি অনুপ জালোটাজির সঙ্গে বাজাতে গিয়েছিলেন এবং সেই প্রোগ্রামে জাকির হোসেনজি পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সঙ্গে বাজাতে এসেছিলেন। প্রদীপ বাবুর বাজনা শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি নিজের তবলার থেকে একটি বায়া উপহার দেন। সবাইকে সম্মান দিয়ে তিনি কথা বলতেন সবসময়। সকলে যখন তাঁকে পণ্ডিতজি বলে সম্মোধন করতেন তিনি খুব লজ্জা পেতেন এবং বিনয়ের সঙ্গে বলতেন আমি পণ্ডিত নই।
আরেক বিশিষ্ট তবলা বাদক প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় জানান, ‘ভারতীয় উচাঙ্গ সঙ্গীতে বিশাল ক্ষতি এমনকি নক্ষত্রপতন। যেটা আর কেউ কোনদিনও উদ্ধার করতে পারবে না। খালি ওনার নাম শুনলে যে কোন স্টেডিয়াম, অডিটোরিয়াম আনাছে কানাচে ভিড় হয়ে যেতো।’
বর্ষীয়ান সঙ্গীত শিল্পী শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় খবরটি শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ‘এই খবরটি কেবলমাত্র নক্ষত্রপতনই নয় মহা আকাশ পতন। মহা আকাশ ভেঙে পড়েছে আমাদের মাথায়। জাকির ভাইয়ের মত এত বড় একজন গুণী মানুষ এই বয়সে চলে যাবে তা আমরা কোনদিনও ভাবতেই পারিনি। তাঁর কাছে আমাদের আরও অনেক কিছু পাওনা ছিল। উনার সঙ্গে আমার খুবই মধুর সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধার ছিল বড় পবিত্র ছিল।’
উস্তাদ জাকির হোসেনের প্রয়াণের খবর পেয়ে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে সমবেদনা, এবং তাঁর সকল ছাত্র-ছাত্রীদের এবং তাঁর ভক্তদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।