আমাজনের মাংসাশী সূর্যশিশিরের দেখা মিলল বাঁকুড়ায়!

জেলা বিজ্ঞান রাজ্য

নিউজ পোল ব্যুরো, সোনামুখী : আমাজনের জঙ্গলের মাংসাশী উদ্ভিদ সূর্যশিশিরের দেখা মিলল এই বাংলায়। সূর্যশিশিরের বৈজ্ঞানিক নাম ড্রসেরা বা দশেরা বার্মানি। সূর্যের আলো যেখানে ভালো করে ঢোকে না, সেই সব জঙ্গলেই এই মাংসাশী উদ্ভিদের দেখা মেলে।

ভারতীয় মুদ্রার আকারে দেখতে বড়জোর ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা লাল ও গোলাপি রঙের ছোট্ট একটি গাছ। আমাজনের গভীর জঙ্গলের এই প্রজাতির উদ্ভিদ মূলত মাংসাশী। পোকামাকড়ই এদের খাদ্য। আর সেই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলল বাঁকুড়ার সোনামুখীর জঙ্গলে। আর আমাজনের জঙ্গলের উদ্ভিদ সূর্যশিশির কীভাবে সোনামুখীর জঙ্গলে এলো তা নিয়েও রীতিমতো তাজ্জব বনকর্তারাও।

বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখী রেঞ্জের বড়নারায়ণপুর মৌজায় একটি মুরগির খামার থেকে কিছুটা দূরে জলাশয়ের পাশে গভীর জঙ্গলে এই উদ্ভিদের দেখা মিলেছে। জঙ্গলে পাতা কুড়োতে গিয়ে স্থানীয়দের নজরে পড়ে এই অদ্ভুত দর্শনের উদ্ভিদটির। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় নিজেই সেখানে গিয়ে সেই উদ্ভিদগুলোর পরীক্ষা করে দেখেন। এমনকি ড্রসেরা বার্মানির ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে এই উদ্ভিদের পরিচয় জানা যায়। সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় বলেন, ‘সোনামুখী রেঞ্জের জঙ্গলে এই মরশুমে বেশ কয়েকটি মাংসাশী উদ্ভিদের দেখা মিলেছে। সোনামুখী রেঞ্জের বড়নারায়ণ এলাকায় একটি মুরগি ফার্মের কাছে একটি জলাশয়ের ধারে জঙ্গলের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই উদ্ভিদগুলির দেখা মেলে। বাংলায় একে সূর্যশিশির বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ড্রসেরা বা দশেরা বার্মানি। সূর্যের আলো যেখানে ভালো করে ঢোকে না, সেই জঙ্গলেই এই মাংসাশী উদ্ভিদের দেখা মেলে।’

বাঁকুড়ার জঙ্গলে মেলা মাংসাশি আমাজনের উদ্ভিদ। ছবি: সংগৃহীত।

তিনি আরও বলেন, ‘এরা ঠিক উদ্ভিদ নয়। গাছের মতো হলেও এরা ছোট, ছোট প্রাণীদের ধরে তাদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে। বড়, বড় উইপোকা, পিঁপড়েরা এদের সংস্পর্শে এলে তাদের কব্জা করে ফেল। এরপর তাদের কার্যত গলিয়ে শরীর থেকে নির্যাস বের করে নিজেদের খাদ্য যোগাড় করে। এই গাছগুলো প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। তবে প্রায় বিরল প্রজাতির এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে খুব কমই দেখা যায়। এখানে তা কীভাবে জন্মালো তা বুঝতে পারছি না! এই উদ্ভিদগুলি যাতে কেউ ছিঁড়ে বা তুলে নিয়ে যেতে না পারে তার জন্য বনকর্মীদের কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে।’

এই বিষয়ে লালগড় গভর্নমেন্ট কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. দেবব্রত দাস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এই মাংসাশী উদ্ভিদ প্রধানত ল্যাটেরাইট মাটিতেই জন্মায়। আমাদের দেশে যাকে সূর্যশিশির বা সান ডিউ বলা হয়। এগুলি অক্টোবর, নভেম্বর মাসে দেখা যায়। তবে লালমাটির জঙ্গলে ডিসেম্বর মাসে আচমকা এদের দেখা মেলা বেশ বিরল ঘটনা। তার মানে, এখানকার আবহাওয়াও এই উদ্ভিদের পক্ষে অনুকূল হয়ে উঠেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। এই গাছগুলি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কাজে লাগে। এদের পুড়িয়ে যে ছাই উৎপন্ন হয় তাকে স্বর্ণভস্মও বলা হয়। আমাজনের জঙ্গলে এই উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। তবে রাঢ়বঙ্গের এই জঙ্গলে ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাওয়াটা সত্যিই বিরল ঘটনা।’