নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রেশন দুর্নীতির অভিযোগ নেহাতই নতুন নয়। রেশন নিয়ে প্রায়ই রাজ্যের আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় নানান রকম দুর্নীতির অভিযোগ। কখনও ভুয়ো রেশন কার্ড, কখনও আবার ওজনে কারচুপির অভিযোগকে ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গিয়েছে।
এবার সেই সমস্যা মেটাতেই কড়া পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার থেকে রেশন পেতে থাকতেই হবে মোবাইল। তাই এরই মধ্যে নয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
রেশনের ওপর নির্ভরশীল গরিব বহু পরিবার যে কারণেই দুর্নীতি রুখতে এবার আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। এবার থেকে নয়া পদক্ষেপ, খাদ্য দফতরের পোর্টালে মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত না করা থাকে, তা হলে আর রেশন সামগ্রী পাবেন না গ্রাহকরা।
এরইমধ্যে খাদ্য দফতরের তরফ থেকে রেশন ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ পরিবারের রেশন কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩২ লক্ষ পরিবার এরই মধ্যে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করিয়ে ফেলেছেন। তবে এখনও বাকি রয়েছে অর্ধেকের বেশি পরিবারের। সেই কাজ যাতে দ্রুত সেরে ফেলা হয়, সেটা সুনিশ্চিত করতেই উদ্যোগী সরকার।
কয়েকদিন আগেই খাদ্য দফতরের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি পরিবারের যে কোনও একজন সদস্যের মোবাইল নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে পোর্টালে নথিভুক্ত করাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রক্রিয়া থাকছে একটু অন্যরকম।
কোনও গ্রাহক যখন রেশন দোকানে রেশন সামগ্রী নেবেন সেই সময় তাঁর থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে সেটি ই-পস মেশিনে নথিভুক্ত করে নেবেন ডিলাররা। এক্ষেত্রে কোনও গ্রাহকের মোবাইল ফোন নম্বর যদি অন্য কোনও পরিবারে একবার নথিভুক্ত করা হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, রেশন ডিলাররা নিজেদের মোবাইল নম্বর কিংবা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের নম্বর গ্রাহকদের দিতে পারবেন না। আর এমন নির্দেশিকা চালু হওয়ার পর থেকেই শোরগোল পরেছে স্বাভাবিকভাবে। চাপে পড়েছেন বহু রেশন ডিলাররা।
এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘খাদ্য দফতরের এক শ্রেণির অফিসার এমন বেশ কিছু নিয়ম চালু করতে চাইছেন, যেগুলি অবাস্তব। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছেন। ডিলারদের ভোগান্তি হচ্ছে। রেশন পেতে হলে মোবাইল থাকতে হবে, এমনটা আইনে কোথাও বলা নেই। বরং সুপ্রীম কোর্টের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রেশনের সুবিধা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না’। এদিকে খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, এই ব্যবস্থা চালু হলে জালিয়াতি আটকানো সম্ভব হবে। এর ফলে একজন যেমন অন্যজনের রেশন তুলতে পারবেন না। তেমনই অন্য কেউ রেশন তুললে গ্রাহকের ফোনে সেই মেসেজ চলে যাবে। সরকারের এই নয়া নির্দেশিকা প্রসঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘এখন প্রত্যেকের হাতে মোবাইল। ফোন নম্বর যদি লিঙ্ক করা থাকে, তাহলে একজন গ্রাহক অন্যের রেশন তুলতে পারবেন না। রেশন সামগ্রী তোলা মাত্রই মোবাইল ফোনে মেসেজ চলে যাবে। সেই সঙ্গেই তিনি কতখানি সামগ্রী পাচ্ছেন সেটাও জেনে যাবেন। ফলে ডিলাররা ঠকাতে পারবেন না’।