গ্রেফতার দক্ষিণ কোরিয়ার বরখাস্ত প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক

নিউজ পোল ব্যুরো: দক্ষিণ কোরিয়ার বরখাস্ত হওয়া প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে ওই দেশের পুলিশ। বুধবার দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ। এই ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায় রচনা করলো। তার কারণ এর আগে ওই দেশের কোনও প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করার নজির নেই।

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য তৎপর ছিল পুলিশ। নিজ বাসভবনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে অবস্থান করছিলেন তিনি। ৩ জানুয়ারি প্রথমবার ইওলকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হলে তাঁর সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। সেই সময় পুলিশ ও তদন্তকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে বুধবার ভোরে প্রায় তিন হাজার পুলিশ এবং তদন্তকারী দল ইওলের বাসভবনের সামনে হাজির হয়। সেখানে উপস্থিত ইওলের সমর্থকদের বাধা পেরিয়ে মই বেয়ে বাসভবনে প্রবেশ করতে হয় তাঁদের। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে পুলিশ ইওলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ইওলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস)-এর প্রধানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর একটি ভিডিও বার্তায় ইওল দাবি করেছেন যে, তাঁর গ্রেফতারি দেশে ‘আইনের শাসন ভেঙে পড়া’র উদাহরণ। তিনি আরও জানান, তিনি সব সময় তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ছিলেন। ইওলের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে তদন্তকারীরা তাঁকে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবেন। তবে এই সময়সীমা বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তদন্তকারীদের আলাদা আবেদন করতে হবে।

গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল দেশজুড়ে সামরিক আইন (মার্শাল ল) জারি করেন। প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, কমিউনিস্ট প্রভাব এবং উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের সমর্থনে বিরোধী শক্তি দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করছে। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না বলে জানান তিনি। সামরিক আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু-কে।

কিন্তু প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। গত ৪৪ বছরে এই প্রথমবার এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দেয়। বিক্ষোভের কারণে দেশজুড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে এই সামরিক আইন বাতিলের জন্য একটি প্রস্তাব আনা হয়। ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। ফলে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হতে হয়।

তবে সামরিক আইন জারির ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি তোলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ইউন সুক ইওল দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। অবশেষে গত ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে বরখাস্তের প্রস্তাব গৃহীত হয়। অধিকাংশ সদস্য বরখাস্তের পক্ষে ভোট দেন। ইউন সুক ইওল বরখাস্ত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে।