নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: ৫১৮ বছরের পুরনো এক মেলা। যা এলাকায় মাছের মেলা নামে পরিচিত। শুধু স্থানীয়রা নয় বহু দূর দূরান্ত থেকে প্রতিবছর মানুষ ছুটে আসে এই মেলাতে। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে চৈতন্যদেবের নাম। ভাবছেন কি এমন মেলা? শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন। এটি একটি মাছের মেলা। এখন ভাবছেন বৈষ্ণব এবং মাছ এটা কি করে সম্ভব! হ্যাঁ সম্ভব। তার পেছনে রয়েছে একটি কাহিনী। কাহিনী শুনবার আগে বর্তমানে যে মেলা বসেছে সেই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ কেজির তেলিয়া ভোলা, ৩০ কেজির আর মাছ,কেজি কেজি রুই,কাতলা, রাঘব বয়াল,চুনো পুঁটি, রুই, কাতলা,ইলিশ,ভেটকি,শংকর মাছ থেকে কাঁকড়া সহ সব ধরণের মাছ। মাছের মেলায় জমজমাট কেষ্টপুর। আর সেই মেলায় বিভিন্ন স্বাদের মাছ কিনতে ভিড় জমেছে বহু মানুষের।
এবার চলুন ফিরে যাই সেই মেলার কাহিনীতে। চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য ছিলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তাঁর বাড়ির পাশেই বসে এই মেলা। এই একদিনের মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। আগে নাম ছিল উত্তরায়ণ মেলা। যা পরবর্তীকালে মাছের মেলা নামেই অধিক পরিচিত।
শোনা যায়, গোবর্ধন গোস্বামী ছিলেন কেষ্টপুর এলাকার জমিদার। সবাই তাঁকে মেনে চলত গ্রামে। আর এই মেলাও শুরু হয়েছিল গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ গোস্বামীর বাড়ির পাশে। সংসার ধর্ম ত্যাগ করে সন্নাসী ধর্মে দীক্ষিত হন। আর এই দীক্ষা গ্রহণ করতে তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে পানিহাটিতে মহাপ্রভু চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে যান। কিন্তু বয়স কম থাকার দরুন মনে ভক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন তাঁকে। কেটে যায় দীর্ঘ ৯ মাস। বাড়ি ফেরে রঘুনাথ। সেই আনন্দে তাঁর বাবা গোবর্ধন গোস্বামী সারা গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের মানুষ তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবদার করেন কাঁচা আমের ঝোল এবং ইলিশ মাছ খাওয়ার। সেই মত ভক্তদের বলেন, বাড়ির পাশের আম গাছ থেকে আম পেড়ে আনতে এবং পাশের পুকুরে জাল ফেলতে। গ্রামবাসীরাও পুকুরে জাল ফেলতেই দেখে মাছ এবং আম জালের মধ্যে। চমকে যান গ্রামবাসীরা। সেই থেকেই প্রতি বছর ভক্তরা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করেন।
বছরের পর বছর ধরে এই রীতি মেনেই মাছের মেলার আয়োজন করা হয়। পয়লা মাঘ উত্তরায়নে এই মেলা চলে। দূর দূরান্ত থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা আসেন। নদী,পুকুর ছাড়াও সামুদ্রিক মাছেরও পসরা নিয়ে বসেন দোকানীরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ এই মেলায় আসেন। ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার,২ হাজার টাকা দরে মাছ বিক্রি হয় এই মেলায়। অনেকে আবার মাছ কিনে পাশের আম বাগানে পিকনিকের আয়োজন করেন। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য নাগরদোলা থেকে খেলনারও ব্যবস্থা আছে। মনিহারি দোকান এবং জিলিপি মিষ্টির দোকানেও চলে কেনাবেচা। সবমিলিয়ে শীতের আমেজ মেখে জমজমাট মাছের মেলা।