নিউজ পোল ব্যুরো : পুরুলিয়া হল লাল পাহাড়ির দেশ। এক দিগন্ত বিস্তৃত লেক, দূর থেকে ভেসে আসছে মাদলের সুর, যতদূর চোখ যায় দেখা যায় সবুজ মিশেছে নীলে, কোথাও কোনো ব্যস্ততা নেই। পরিচিত মানুষের অপরিচিত মুখ নেই। শুধু আছে লাল মাটির রাস্তা ও চারিদিকে শিমুল, পলাশের সমারোহ। এই নির্লিপ্ত শান্তি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে পুরুলিয়া। কলকাতা ও পুরুলিয়ার রেলপথের দূরত্ব মাত্র ৩২২ কিলোমিটার। তাই লাল মাটির রাস্তা, পাহাড়, নদী ও ছৌ নাচের টানে বারবার ছুটে যাবে ভ্রমণ পিপাশু মানুষ। শীতে পুরুলিয়া জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীতে নামতে না নামতেই পর্যটকদের ভীড় উপচে পরে সেখানে। আসলে শীত কালটাই তো একেবারে সঠিক সময় পুরুলিয়ার মতো জায়গায় ঘোরবার জন্য।
ডিসেম্বর মাসে শহরে শীত তেমন না পড়লেও জানুয়ারী মাসে হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে এটা পরিস্কার বলা যায়। আর এই শীতকাল মানেই দু-একদিনের ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করে অনেকেই। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে পুরুলিয়া একটি অন্যতম ভ্রমণকেন্দ্র। পুরুলিয়া মানেই সর্বপ্রথম চোখের সামনে ভেসে ওঠে অযোধ্যা পাহাড়। এই অযোধ্যা পাহাড়ের সামনে দাঁড়ালেই বোঝা যায় কেন পশ্চিমবঙ্গের রুক্ষ মালভূমি অঞ্চলের মধ্যে অযোধ্যা পাহাড়কে মানবদেহের ফুসফুসের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
শাল-সেগুনের সবুজ রঙে ঘেরা অযোধ্যার হিলটপকে এলাকার স্থানীয় মানুষেরা পবিত্র স্থান বলে মনে করেন। কারণ এখানেই রয়েছে সীতাকুন্ড। অযোধ্যা পাহাড়ের বুকের ভিতর ছোট জলের ধারা সীতাকুন্ড। কথিত আছে, রামচন্দ্র বসবাসের সময় এখানে কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলেন, সেই সময় সীতার তৃস্না মেটাতে ভূমিতে তির মেরে জল বের করে সীতার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন রাম। অযোধ্যা পাহাড়ের সব থেকে উঁচু ঢিলা ময়ূর পাহাড়। দেখে মনে হয় এই পাহাড়েই যেন সূর্যদেবের গোটা সংসার। এখানে পায়ে হেঁটে খানিকটা উঠলেই রয়েছে একটা ছোট হনুমান মন্দির। ঝিম ধরে আসা বিকেলে এই নিস্তব্ধতা সকলকেই মুগ্ধ করে।
পুরুলিয়ার আর একটি জায়গা হল বড়ন্তি জলাধার। বড়ন্তি মানেই যতদূর চোখ যায় নীল ছবির মতো পাহাড়। তার কোলেই এক টুকরো নীল জলাধার। যার কাছে এসে দাঁড়ালেই পায়ে আসে ঠেকবে লেকের ঠান্ডা জল। বাতাসে কান পাতলেই পরিযায়ী পাখিদের ঘরে ফেরার গান। পুরুলিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান গড়পঞ্চকোট, যেখানে বর্গী আক্রমণের স্মৃতি চিহ্ন আজও রয়েছে। পাহাড়ের কোলে ইতিহাসকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ। সেই দুর্গের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ইতিহাস রোমন্থন করলে আজও মানুষ শিহরিত হয়।
অন্যদিকে, পুরুলিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে গাজাবুরু পাহাড়ের নাম। যারা রক ক্লাইবার রয়েছেন তাঁদের কাছে এই গাজাবুরু পাহাড় স্বর্গের থেকেও সুন্দর। এই পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য অবিভুত করে। পুরুলিয়ার মুরগুমা দর্শন না করলে অনেক কিছুই মিস করবেন। পুরুলিয়ার গভীর জঙ্গলের মধ্যেও যে এত সুন্দর একটা পাহাড় ঘেরা জায়গা লুকিয়ে আছে সেটা অনেকেরই অজানা। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে শাল,পলাশ,সেগুন ঘেরা একটা ছোট জলাধারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই পর্যটনস্থল। যেখানে ময়ূরের দর্শন পাওয়া যায়। পুরুলিয়ার সবচেয়ে বোরো আকর্ষণ এখানকার ছৌ নাচ। এখানকার চড়িদা গ্রাম ছৌ মুখোশ শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
অপরদিকে, পুরুলিয়া জেলার কংসাবতী নদীর ধরেই রয়েছে দেউলঘাটা। পুরুলিয়ার মধ্যে এ যেন এক অন্য পুরুলিয়া। স্থানীয় মানুষরা যাকে মন্দিরের দেশ নামে চেনে। ইতিহাস বলছে জৈনদের ২৪ তম অর্থাৎ শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর এখানে এসেছিলেন। আজও দেউলঘাটা গেলে দেখা যায় প্রায় ১৫টি প্রাচীন মন্দির, ছোট ছোট কয়েকটি ধর্মীয় সৌধের ধ্বংসস্তূপ। এছাড়াও রয়েছে কাশিপুর রাজবাড়ী, বামনী জলপ্রপাত – এই জলপ্রপাত অযোধ্যা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, মার্বেল লেক, জয় চন্ডি পাহাড়, পাখি পাহাড়, মাথাবুর, বাঘমন্দি, তুরাগ ফলস, দোল ডাঙ।