নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হুগলি নদীতে কী বন্ধ হয়ে যেতে পারে জলপথ ফেরি পরিষেবা? এই খবরে আশঙ্কায় কর্মীরা। নাজেহাল হতে চলেছেন যাত্রীরা। টানা পাঁচ বছর হয়নি ‘ড্রাই ডক’ তাই আগামী মাস থেকেই বসে যেতে পারে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির চারটি লঞ্চ। এরফলে যেমন সঙ্কটে পড়বেন এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা তেমনই পরিবহনের জন্য নাকাল হতে হবে যাত্রীদের।
জানা গেছে, এক টানা পাঁচ বছর হয়নি ড্রাই ডক অর্থাৎ লঞ্চের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তাই আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পরে বসে যেতে পারে জলপথ পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত চারটি লঞ্চ। উল্লেখ্য, যাত্রী সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লঞ্চগুলির স্বাস্থ্য কেমন আছে তা খতিয়ে দেখা হয়। আর এই প্রক্রিয়াকেই ড্রাই ডক বলা হয়। যেখানে যেমন প্রয়োজন সেখানে লঞ্চের মেরামত করা হয়। তারপর লঞ্চটির সার্ভে করা হয়। ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় ট্রান্সপোর্ট বা আইটিডব্লিউ এই সার্ভে করে থাকে। নিয়ম হল লঞ্চের ড্রাই ডক না হলে সেই লঞ্চটির সার্ভে করা যায় না। আর সার্ভে না হলে যাত্রী পরিবহণের জন্য অযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়ে যায় সেই লঞ্চটি। আর এরপরই সেই লঞ্চটিকে বসিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ড্রাই ডকের সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আর ড্রাই ডক করা সম্ভব নয়। সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানালেও সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আইটিডব্লিউ।
অপরদিকে, হুগলি নদীতে যাত্রী পারাপারের জন্য জলপথ পরিবহনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। প্রতিদিন অনেক মানুষ কাজের সূত্রে এই নদী পারাপার করেন। তাই আগামী মাসে যদি চারটি লঞ্চ হঠাৎই বসে যায় তাহলে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হবে যাত্রীদের। অন্যদিকে, এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও একরকম আতঙ্কে রয়েছেন।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে দু’মাসের বেতন বাকি কর্মীদের। তাই আরও চারটি লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের অবস্থা কি হতে পারে সেই আশঙ্কায় আতঙ্কিত তাঁরা।
যেই চারটি লঞ্চ বসে যেতে পারে তার মধ্যে তিনটি এমভি কংসাবতী, এমভি মতিঝিল ও এমভি মেঘমা চলে হাওড়া নাজিরগঞ্জ রুটে এবং এমভি দৃষ্টি চলে হাওড়া বাউড়িয়া রুটে।
অথচ এই চারটি লঞ্চের পাশাপাশি আরও কয়েকটি লঞ্চের মেরামতির জন্য এরই মধ্যে শালিমার ডক কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের থেকে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা পেয়েছে।
উল্লেখ্য, সমবায়ের হাল ফেরাতে রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের পক্ষ থেকে পাঁচটি লঞ্চ ভাড়ায় দেওয়া হয়েছিল। তবে আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। গঙ্গাসাগর মেলায় কম বেশি ৩০ টি লঞ্চ ব্যবহার করা হয়। তাই আশঙ্কা যে, যে পাঁচটি লঞ্চ সমবায়কে ভাড়ায় দিয়েছে ডব্লিউবিটি সেগুলিকেও গঙ্গাসাগরের জন্য টেনে নেওয়া হতে পারে।
সমিতির এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন যে এই বিষয়টি রাজ্য পরিবহন বিভাগে জানানো হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন দফতরের কর্তারা। উল্লেখ্য, একসময় সমবায়ের হাতে ছিল প্রায় ২৬ টি লঞ্চ কিন্তু এখন সেই সংখ্যা এসে ঠেকেছে ৮টি তে। তারমধ্যে ৪টি লঞ্চ বসে গেলে বেকায়দায় পড়তে হবে তাঁদের।