মৌমিতা সানা, হাওড়া: হাওড়া সদর হাসপাতাল। যার অপর নাম দেওয়া হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। যদিও সেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আর হাসপাতালে নেই, সেখানে চলছে এখন টোটোর দৌরাত্ম্য। হাসপাতালের মধ্যেই এখন টোটোর দাপাদাপি রীতিমতো নাজেহাল করে দিয়েছে সকলকে। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না বেশিরভাগ ওষুধ, ফলে যেতে হচ্ছে বাইরে। তাই একের পর এক টোটো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে সারাক্ষণ এই হাসপাতালের ভিতরে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই হাসপাতালের মধ্যেই টোটোর দৌরাত্ম্যে নাজেহাল অবস্থা রোগীর আত্মীয় পরিজনদের। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের দেওয়া অনেক ওষুধই বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। আর রাত ৯ টা বাজলেই ন্যায্য মূল্যের দোকান যায় বন্ধ হয়ে! তাই রাত হলেই সমস্যা বাড়ছে রোগীর আত্মীয়দের। হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকান থেকে চড়া দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন দুঃস্থ রোগীর আত্মীয়রা।

হাওড়া সদর মহকুমার লোকজন তো বটেই, হাওড়া শহরের একাংশের মানুষও হাওড়া সদর হাসপাতালের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে সব ধরনের ওষুধ মিলছে না বলে অভিযোগ তুলছেন বহু রোগীর পরিজনেরা। রাত ৯ টা বাজলেই ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের দুর্ভোগ বাড়ছে। ওষুধের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা। এছাড়াও হাসপাতালের মধ্যে গজিয়ে উঠেছে টোটোর অবৈধ পার্কিং। যার জেরে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতেও বাঁধা পাচ্ছে। হাসপাতালের মধ্যে নেই রোগীর আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে আসা গাড়ির পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা। পরিস্থিতি এমনই যে রোগীকে নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতালে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। টোটো সরিয়ে তারপরে ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি করতে হচ্ছে। যার জেরে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হতে হচ্ছে রোগীর পরিবার থেকে সকলকেই। হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা করাতে এসেছেন আজাদ, তাঁর অভিযোগ,’ ডাক্তাররা যে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন তা নায্যমূল্যের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে থেকেই সব ওষুধ কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। আমি অল্প বেতনে একটা দোকানে কাজ করি। এত টাকা কোথায় পাবো, হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকান রাত্রি ৯ টা বাজলেই বন্ধ হয়ে যায়। খুবই সমস্যা হচ্ছে। নার্স, ডাক্তারাও কিছুই শুনছেন না। খারাপ ব্যবহার করছেন।’
অপর এক রোগীর আত্মীয় নীলু চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে টোটোর দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, তার সঙ্গে রয়েছে অবৈধ পার্কিং। রোগীর পরিবারের লোকেদের রাতে থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। তাঁদের গাড়ি রাখার কোন ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। ভিতরের কর্মীরাও সঠিকভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন না!’

রোগীর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, সরকারি ওষুধ ছাড়া অনেক ওষুধই বাইরে থেকে কিনে আনতে বলছেন চিকিৎসকেরা। দিনের পর দিন এভাবে চললেও সমস্যার তার কোন সঠিক সমাধান হচ্ছে না।
অভিযোগ হাসপাতালে থাকা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে বেশিরভাগ ওষুধই পাওয়া যায় না। আর বাইরে থাকা ওষুধের দোকান রাতে খোলা থাকে না। ওষুধ না পেয়ে রোগী ও তাঁদের পরিবারকে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় রোগীর আত্মীয়দের। এছাড়াও হাসপাতাল চত্বরে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের ছাড়াও বহিরাগত লোকেদের আনাগোনা নিয়েও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয়রা।
যদিও সব অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত। তিনি বলেন, ‘নতুন লোককে ওই ন্যায্য মূল্যের দোকান চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা শীঘ্রই দোকান চালু করবেন। বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত রয়েছি। হাসপাতালের মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে বলেই আমি আশাবাদী।’
যদিও হাওড়া হাসপাতালের চূড়ান্ত অব্যবস্থার জন্য দুর্নীতি ও কাটমানিকেই দায়ী করে বিজেপি নেতা উমেশ রায় বলেন, ‘হাওড়ার কিছু নেতা ও মন্ত্রীর মদতেই রাজ্য সরকারের বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা নেতা ও মন্ত্রীর পকেটে ঢুকছে। আর হাসপাতাল সুপার নিরীহ ও ভালো মানুষ, তিনি শুধু সই করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের এই চিত্র এই সরকারের আমলে বদলের কোনো সম্ভাবনাই নেই।’

পাশাপাশি গোটা অব্যবস্থার প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘হাসপাতালের মধ্যে অবৈধ পার্কিং বরদাস্ত করা হবে না। আমি সুপারকে বলবো অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে। তাতে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। হাসপাতালের মধ্যে স্থায়ী পুলিশি বন্দোবস্ত করা দরকার। এছাড়াও ওই দোকান হস্তান্তরের জন্য এই সমস্যা তৈরি হয়েছে, দ্রুত মিটে যাবে। এছাড়া ভ্যাকসিন না পাওয়ার বিষয় নিয়ে আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলবো।’
আদপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষনাই সার, বাস্তবের ছবিটা যে সম্পূর্ণ অন্যরকম তা খুব ভালোভাবেই প্রমাণ করে দেয় হাওড়ার এই হাসপাতালের ছবি। শাসক বিরোধী লড়াইয়ে পড়ে এখন প্রাণ ওষ্ঠাগত সধারণ মানুষের,তাই প্রশাসনিক মহলের আশ্বাস কী আদপে ফেরাতে সক্ষম হবে হাসপাতালের আসল চিত্রকে, অপেক্ষা এখন সেই সময়ের।