নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিগত কয়েক বছরে একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে যা বাংলার মানুষকে হতবাক করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আরজিকর হাসপাতালের মেডিক্যাল ছাত্রী তিলোত্তমার রহস্যজনক মৃত্যু। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের নাম উঠে এলেও, তিলোত্তমার পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী আরও অনেকেই এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত। এই ঘটনার তদন্তের ভার নিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু সময়মতো চার্জশিট জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই মামলার দুই অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মন্ডল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তিলোত্তমার পরিবারের দাবি, তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর পিছনে এক বৃহৎ ষড়যন্ত্র কাজ করছে, যা সিবিআই এড়িয়ে যাচ্ছে। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র সঞ্জয় রাই নন, আরও অনেকেই দোষী। কিন্তু সিবিআই তদন্তে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক বাদ দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, সাক্ষীদের মধ্যে নির্যাতিতার বাবা মায়ের বক্তব্যই নেওয়া হয়নি।
এর আগে, পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে তদন্ত পুনরায় শুরু করার দাবি জানানো হয়েছিল। তবে হাইকোর্ট এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকায় বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করে। এখন তাঁদের একমাত্র আশা সুপ্রিম কোর্ট। তিলোত্তমার বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “সিবিআই ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। যার জন্য জামিন পেয়েছেন এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মন্ডল। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় দোষী হলেও আরও যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? সিবিআইয়ের তদন্তে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে আর এই কারণেই হাইকোর্টে গিয়েছি।
তিলোত্তমার বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, প্রমাণ লোপাটের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সিবিআই বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, তদন্ত সঠিকভাবে হলে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে যাবে। এই কারণেই তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত অভিযোগ এবং তদন্তের ‘গ্রে এরিয়া’ তুলে ধরতে চাইছেন। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট দেখেছে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ঠিক ছিল, তাই হস্তক্ষেপ করেনি। তবে পরিবারের সিদ্ধান্ত আদালতের উপর নির্ভর করবে।” আগামী সোমবার এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের সামনে উপস্থাপন করবেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তাঁদের আশা, শীর্ষ আদালত সঠিক বিচার করবে এবং তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর জন্য প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেবে।