নিউজ পোল ব্যুরো:- বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা যেন একাকিত্বের এক ভয়ঙ্কর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য এটি আরও কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন কিংবা সমাজের কাছ থেকে যখন কেউ পর্যাপ্ত সহানুভূতি বা সাহায্য পান না, তখন বেঁচে থাকাটাই যেন এক কঠিন বোঝার মতো হয়ে ওঠে। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা নিঃসঙ্গতার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আবার কেউ কেউ অন্য উপায় খোঁজেন। জাপানের একটি বিশেষ সামাজিক বাস্তবতা এই কথারই প্রমাণ দেয় – যেখানে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা নিঃসঙ্গতা ও দারিদ্র্যের হাত থেকে রেহাই পেতে অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছেন, যাতে তাঁরা জেলে গিয়ে অন্তত মাথার উপর ছাদ ও খাবারের নিশ্চয়তা পায়।
এই বাস্তবতারই নির্মম উদাহরণ আকিয়ো নামের ৮১ বছর বয়সী এক জাপানি বৃদ্ধা। তিনি একাকিত্ব এবং দারিদ্র্যের কারণে একাধিকবার স্বেচ্ছায় অপরাধ করেছেন, শুধুমাত্র জেলে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার জন্য। তাঁর মতে, একা বাঁচার চেয়ে জেলে জীবন অতিবাহিত করা অনেক ভালো। অন্তত সেখানে খাবারের চিন্তা নেই, কেউ তাঁকে এক ফেলে চলেও যাবে না এবং থাকার জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট জায়গা। আকিয়োর কারাবাসের গল্প শুরু হয়েছিল ৬০ বছর বয়েসে, যখন তিনি খাবার চুরির দায়ে প্রথমবার গ্রেফতার হন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দু-মাসে একবার পাওয়া সামান্য পেনশনের উপর নির্ভর করে চলতে হত তাঁকে। পারিবারিক সহায়তা না থাকায় তিনি আবারও চুরির পথ বেছে নেন। চুরির অপরাধে জেলে যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গে থাকতেন। তবে তাঁর ছেলে মাঝেমধ্যেই তাঁকে এক ফেলে চলে যাওয়ার হুমকি দিতেন। এই হুমকি তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয় এবং একসময় তিনি ভাবতে শুরু করেন বেঁচে থাকার আর কোনো মানেই নেই। কিন্তু মৃত্যুর পরিবর্তে তিনি এমন একটি পথ বেছে নেন যেখানে অন্তত মিলবে এক নিশ্চিত ও নিরাপদ আশ্রয়।
জাপানে আকিয়োর মতো আরও অনেক বৃদ্ধাই এই একই পথ বেছে নিচ্ছেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তোচিগি মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আকিয়ো। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন – তাঁর ছেলে তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। জাপানের মহিলা সংশোধনাগারগুলোতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি বন্দিদের আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ২০০৩ সালের তুলনায় বর্তমানে এই সংখ্যা চারগুন বেশি। তোচিগি মহিলা কারাগারে প্রায় ৫০০ বন্দি রয়েছেন, যাঁদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বৃদ্ধা। তাঁদের দেখাশোনার জন্য কর্মীও রয়েছেন, আর পুরো ব্যবস্থাপনা অনেকটাই হাসপাতালের মতো। তাই অনেক বৃদ্ধাই মনে করছেন, নিঃসঙ্গতার কষ্টের চেয়ে জেলের জীবন অনেক নিরাপদ। জাপানে বৃদ্ধদের মধ্যে এই প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে— দারিদ্র্য ও একাকিত্ব। সরকার থেকে দেওয়া পেনশন ও সামাজিক সহায়তা অনেক সময় যথেষ্ট নয়। তাছাড়া পরিবারের কাছ থেকেও পর্যাপ্ত সহানুভূতি ও যত্ন না পেয়ে অনেক বৃদ্ধই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ফলে তাঁরা অপরাধ করে জেলে যাওয়ার মাধ্যমে নিরাপদ জীবন বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর এটাই যেন জাপানের নতুন এক রূপ।